স্টাফ রিপোর্টার ॥
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহধর্মিনী লায়লা সিদ্দিকীর নির্বাচনে আসার কথা জানালেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলার রামপুর বাজারে একটি পথসভায় তিনি একথা জানান।
এ সময় তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে, জিয়ার আমলে ১৪বছর জেল খেটেছি। ৩৯২টি মামলায় আসামী হয়েছি এবং সবকিছু উতরেছি আপনাদের কারণেই, আপনাদের ভালবাসায়। আপনাদের প্রেম, আমার প্রতি আস্থা, বিশ^াস আমাকে আজও শক্তি জোগায়। আপনাদের সামনে লায়লা সিদ্দিকী আসবে। আজকে আপনারা যেভাবে আমাকে গ্রহন করেছেন, একইভাবে এর চাইতেও বেশি অগ্রণী হয়ে তাঁকেও আপনারা গ্রহন করবেন।
তিনি আরো বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, স্বাধীনতা যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ লুণ্ঠন করার চেষ্টায় আছে একদল স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি। আপনারা তাদেরকে দেখেছেন অতীতে। তারা শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে চায়। আপনাদের সাথে আমার সম্পর্ক তিন প্রজন্মের। অনেকের দাদা, অনেকের বাবা, অনেকে নিজে আমার সহকর্মী ও কর্মী ছিলেন। আজকে তারা সন্তানের মত আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে। আমরা কোনও জনসভা করতে আসিনি, আমরা বলতে এসেছি আমার সাথে লায়লা সিদ্দিকী আছেন। যাকে আপনারা ৮৬সালে ভোট দিয়ে আমাকে জেলমুক্ত করেছিলেন। কোন মার্কায়, মোমবাতি মার্কায়। তাই কালিহাতীর মানুষের কাছে মার্কা কিন্তু কোন দিন বড় নয়। কিন্তু আমি আপনাদের বলতে পারি যদি আমাকে নির্বাচনে আসতেই হয়, তাহলে শেখ হাসিনার ইচ্ছা না হলে, তিনি না চাইলে আমি কোনও মতেই আসবনা। কারণ আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী। আমার লড়াই কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, আমার লড়াই শোষণের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, ঘুষের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমার শক্তি জনগণ, অস্ত্র নয়, পুলিশ নয়, সন্ত্রাসী নয়। আপনারা জানেন, আমার কাছে কোনও দিন কোনও সন্ত্রাসী জায়গা পায়নি। আমি সন্ত্রাসের রাজনীতি করি নাই। ভালবাসার রাজনীতি করেছি, উন্নয়নের রাজনীতি করেছি।
এর আগে শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুম্মার নামাজের পর সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়ছার, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি ভাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকীসহ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলার ছাতিহাটী গ্রামে বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেন। কবর জিয়ারত শেষে কালিহাতীর এলেঙ্গা রিসোর্টে দুপুরের খাবার ও বিশ্রাম গ্রহন শেষে পূর্বনির্ধারিত পথসভায় যোগদিতে রামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে তিনি পৌজান ও বালিয়াটা বাজারে স্থানীয়দের সাথে কুশল বিনিময় করেন। রামপুরের পথসভা শেষে সন্ধ্যায় সিংনা গ্রামে জেলা মৎসজীবী লীগের সদ্য প্রয়াত সিনিয়র সহসভাপতি মীর ইমরুল হাসান শিবলুর বাড়িতে গিয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানান। পরে উপজেলা সদরের বাসভবনে গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে রাত নয়টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেন।
এদিন তিনি দ্বিতীয়বারের মত নিজের নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে গণসংযোগ করেছেন। এর আগে দীর্ঘদিন পর গত মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ২০টি গাড়ির বহর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ শুরু করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বিগত ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হজ, তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারানোর পর আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার হন। দেশে ফেরার পর কারাগারেও যেতে হয় তাঁকে। পরে তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বিগত ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁর গাড়িতে প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনাও ঘটে। প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করার পর প্রতিকার না পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান। এ ঘটনার পর থেকে রাজনীতি ও কালিহাতীতে তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লতিফ সিদ্দিকীর গণসংযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন রাজনৈতিক সচেতন মহল ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।