
ইমন হোসেন ॥
টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রায় সকল রাস্তাগুলোর অবস্থাই বেহাল। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীর। দীর্ঘদিন যাবত টাঙ্গাইল পৌরসভার রাস্তাগুলো বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে এসব রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে মানুষের চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। দ্রুত রাস্তাগুলো সংস্কারসহ সকল পৌর সুবিধা বাস্তবায়নের দাবি সকলের।
জানা যায়, বিগত ১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইল পৌরসভাটি ১৯৮৯ সালে ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। ১৩৬ বছরের পুরাতন এই পৌরসভার পরিধি ও পৌরভবনের পরিবর্তন হলেও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে পৌরবাসীর সেবার মান বাড়েনি। বিশেষ করে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রধান প্রধান সড়কের বিভিন্ন অংশে কাপেটিং উঠে গেছে। অনেক রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাতায়াতকারীদের। স্থানীয়রা বলছেন, জেলার প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার যদি এই অবস্থা হয় তাহলে অন্য পৌরসভাগুলোর কি হবে। আমরা প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় ভ্যাট, ট্যাক্স দিলেও ঠিকমতো পৌরসভারও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না।
জেলা থেকে এসপি পার্ক হয়ে কাগমারা যাওয়ার ব্যস্ততম রাস্তাটি দীর্ঘ প্রায় দুই বছর যাবত সংস্কার না করায় প্রায় ১ কি.মি. এলাকা জুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা দিয়ে যানবাহন ও মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিকল্প রাস্তা না থাকায় এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে জেলা শহরে আসতে হয়। আর প্রায় প্রতিদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে শহরের রাস্তা ব্যবহারকারীদের। কোমলমতি শিক্ষার্থী ও এই রাস্তায় চলাচলরত রোগীরা বেশি বিপদে পড়েছে। কখনও এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীর বই খাতা পড়ে পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কখনও আবার দুর্ঘটনার কবলে গুরুতর আহত হচ্ছে। রোগী নিয়ে হাসপাতালেও দ্রুত যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না এতে রোগীর অবস্থাও সংকটপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া শহরের নিরালা মোড় থেকে জেলা যাওয়ার রাস্তা, ৬নং ওয়ার্ডের কলেজ পাড়া, প্যারাডাইস পাড়া, এনায়েতপুর, কাগমারা, থানাপাড়া, সাহাপাড়া, আদি টাঙ্গাইল, চরপাতুলিপাড়া, সাবালিয়াসহ প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেরই রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা রয়েছে। রাস্তায় চলাচলরত একাধিক ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক জানান, দীর্ঘদিন যাবত একটি রাস্তাও চলাচল উপযোগী না। এসব রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে কখনও তাদের গাড়ি উল্টে যাচ্ছে। আবার কখনও গাড়ির এক্সেল ভেঙে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যাত্রীরাও প্রতিদিন কেউ না কেউ আহত হচ্ছেন।
পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের এনায়েতপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার যুবক সজিব মিয়া বলেন, ভোট আসলে জনপ্রতিনিধিরা নানা রকম উন্নয়নের কথা বলে ভোট চায়। কিন্তু ভোটে জিতেই তারা উন্নয়নের কথা ভুলে যায়। ১৩৬ বছরের টাঙ্গাইল পৌরসভা প্রথম শ্রেণি হওয়া সত্ত্বেও আমরা নাগরিক সেবা পাচ্ছি না। পৌরসভার রাস্তার চাইতে চরাঞ্চলের রাস্তার মান অনেক ভালো। রিকশাচালক আব্দুল মজিদ বলেন, বিগত বছরের চেয়ে বর্তমানে শহরের রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টি নামলে সেই দুর্ভোগ আরও তীব্র হয়। বিশেষ করে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এতে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। টাঙ্গাইল শহরের জেলা সদর সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়ক দিয়েই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, আদালত চত্বরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে যেতে হয়। অপরদিকে এ সড়ক দিয়েই নিরালা মোড়সহ শহরের দক্ষিণ দিকে যাতায়াত করতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। অনেক জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তে পানি জমাসহ সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীদের।
সম্প্রতি জেলা সদর সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। তার আগে সড়কের পাশের দখল হওয়া জায়গা উদ্ধার করতে স্থাপনাও ভাঙা হয়। অপরিকল্পিতভাবে সংস্কার কাজের কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। তারা বলছেন, ভবিষ্যতে যে রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে, সেই চিন্তা কেন পৌর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাবিদদের ছিল না? আগেই কেন দখল উদ্ধার করা হয়নি? তাহলে ড্রেন করতে যে বরাদ্দ ছিল তা কি অপচয় হলো না? ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আগে থেকে নেওয়া থাকলে এখন জনগণের এ রকম দুর্ভোগ হতো না। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আব্দুল্লাহ বলেন, রাস্তা ভাঙচুরের কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। অপরদিকে অটো ও রিকশাগুলো বেয়ারিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাস্তা ভাঙাচুরার কারণে অনেক যাত্রীই এসব সড়ক দিয়ে আসতে চান না। মীম আক্তার নামের একজন পথচারী বলেন, বর্তমানে শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটাও দুষ্কর। রাস্তা ভাঙাচুরার কারণে অনেক রিকশা ও অটোরিকশার চালকরা যেতে চান না। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে এসব ভাঙা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। একই এলাকার নুরু মিয়া জানান, দীর্ঘদিন যাবত পৌরশহরের ১৮টি ওর্য়াডের প্রায় সকল রাস্তা বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টি হলে পানির কারণে কোথায় গর্ত আর কোথায় ভালো রাস্তা বুঝার উপায় থাকে না। ফলে প্রতিদিন মানুষ দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। দ্রুত রাস্তা সংস্কারসহ নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, নিরালা মোড় থেকে ডিসট্রিক্ট পর্যন্ত নতুন ড্রেনের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ১০০ মিটার ঢালাই হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কারণে রাস্তা সংস্কার ও ড্রেনের সংস্কার কাজে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। কোনো প্রতিবন্ধকতা না হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই রাস্তায় জলাবদ্ধতা দূর করা হবে। তিনি আরও বলেন, রাস্তার দুই পাশে উন্নতকরণ, ড্রেন সংস্কার এবং লাইটিংসহ এই তিন প্রজেক্ট নিয়ে মোট ১৪ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। এই সব কিছুই আধুনিক মডেলে করা হবে।