টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে টাঙ্গাইলের জনজীবন

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল স্পেশাল লিড নিউজ

জাহিদ হাসান ॥
টানা দুই দিন ধরে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। অসময়ের বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বাইরে বের হওয়া লোকজনকে। আশ্নিন মাসের এই সময়ে আকাশ ভেঙে নেমেছে বৃষ্টি। সেই সঙ্গে দমকা শীতল বাতাস বইছে। ফলে টাঙ্গাইলসহ বেশির ভাগ এলাকার জনজীবন যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। নানা কাজে বাইরে যাঁরা বের হয়েছেন তাঁরা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। বর্ষার মতো বৃষ্টিতে টাঙ্গাইলের রাস্তাঘাটগুলো কাদায় মাখামাখি হয়ে পড়েছে।
দুইদিন ব্যাপী টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে টাঙ্গাইলের জনজীবন। বুধবার (৪ অক্টোবর) থেকে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ভোর সকাল থেকে কখনো হালকা, কখনো মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথাও কোথাও অধিক ভারী বৃষ্টিপাতে ব্যাপক জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে শহরের রাস্তাগুলো। এছাড়া প্রায় এলাকার নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন শ্রমজীবী, দিনমজুর ও দৈনন্দিন কাজে বাইরে বের হওয়া মানুষ। দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। পাখি ও প্রাণিরাও পড়েছে মহাসঙ্কটে।
কাঠমিস্ত্রি পরিমল সুত্রধর টাঙ্গাইল নিউজকে বলেন, ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারের একটি ঘরে আটকে আছি। বৃষ্টির কারণে আজ আর কাজে যাওয়া হবে না। দিন হাজিরা হিসেবে তাঁরা ৫০০ টাকা করে আয় করেন। এভাবে বসে থাকা মানেই ক্ষতি। বৃষ্টির কারণে কর্মহীন দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন বাজারের অন্য শ্রমজীবীরা। রিকশাচালক আবু মুসা টাঙ্গাইল নিউজকে বলেন, মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার কারণে লোকজন ঘরের বাইরে আসে না। তাই পলিথিন মুড়ি দিয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই। বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকায় দৈনিক পত্রিকা বিলি করতে পারেননি হকাররা। পত্রিকার তিনজন পাঠক টাঙ্গাইল নিউজকে জানান, সকালে পত্রিকা না পড়লে ভালো লাগে না। বেলা গড়িয়ে গেলেও এখনও পত্রিকা পাইনি। পত্রিকার হকার শামিম বেলা আড়াইটার দিকে টাঙ্গাইল নিউজকে বলেন, ভোরে পলিথিনে মুড়িয়ে পত্রিকা নিয়ে বের হয়েও ভারী বৃষ্টির কারণে এখনও সব পত্রিকা বিলি করতে পারিনি।

বৃষ্টির কারণে গরু ছাগল ও হাঁস-মুরগির বাজারেও আমদানি ও বেচাকেনা একবারেই কম। বৃষ্টিতে বিক্রি কমে যাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। রেইনকোর্ট পড়ে ছাতা মুড়ি দিয়ে কাঁচাবাজারে আসা ফারুক হোসেন টাঙ্গাইল নিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে দোকানপাট খুলেছে কম। এরা প্রতিটি জিনিসের দামই বেশি বলছে। দিনভর বৃষ্টির কারণে শহরের রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল কমে গেছে। রিকশাচালক আবুল কালাম টাঙ্গাইল নিউজকে বলেন, ২০ বছর ধরি রিকশা চালাই। রাস্তাত মানুষজন কম। কামাইও কম। তারপরও পেটের দায়ে প্রত্যেকদিন রিকশা চালাছি।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। এতে একদিকে যেমন কৃষির ক্ষতি হচ্ছে তেমনি দিন মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১১ মিলিমিটার। আবহাওয়ার এমন বৈরি আচরণে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকেই। লোকজন তেমন একটা বের না হলেও সকালে অফিস-আদালত এবং স্কুল-কলেজগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পড়েন বিপাকে। এদিকে, বৃষ্টির অজুহাতে বরাবরের মতো রিকশা-ভ্যানের চালকরা ভাড়া চাচ্ছেন ইচ্ছামতো। বাড়তি অর্থ গুণতে গিয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন বাক-বিতণ্ডায়। কম্পিউটার ব্যবসায়ী তরুণ দেবনাথ টাঙ্গাইল নিউজকে জানান, শহরে রিকশা ভাড়া অন্য সময় নেওয়া হয় ১৫-২০ টাকা। কিন্তু বৃষ্টির অজুহাতে রিকশা চালকরা ভাড়া নিচ্ছে ৩০/৪০ টাকা। একই অভিযোগ করলেন শিক্ষার্থী দেবাশিষ রায়ও। কেন ভাড়া বেশি দিতে হবে একথা জানতে চাইলে এক রিকশা চালক বলেন, বৃষ্টি হচ্ছে তাই ভাড়া বেশি দিতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস টাঙ্গাইল নিউজকে জানান, আসন্ন সবজির ক্ষতি হবে সবচেয়ে বেশি। বৃষ্টিপাতে ক্ষেতের রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এতে বাজারে কয়েকদিনের মধ্যে সবজির সংকট দেখা দিতে পারে।

 

 

২৫৩ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *