
হাসান সিকদার ॥
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, অর্থনৈতিকভাবে আমেরিকা যদি স্যাংশন দেয়। তাহলে আমরাও দেখবো কিভাবে এটি মোকাবেলা করা যায়। আমাদের সরকার ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে আছে। বর্তমান সরকার দেশকে উন্নয়ন ও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কাজেই স্যাংশন দিয়ে আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নের ধারাকে তারা নিভৃত করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উন্নয়নের অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়িতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত দোখলা রেস্ট হাউজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও বন বিভাগের দুইটি ব্যারাক উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা অনেক বড় দেশ। অর্থনৈতিকভাবে, শক্তির দিক দিয়ে তাদের অনেক নিষেধাজ্ঞা হুমকি আমরা এগুলো মোকাবেলা করব। শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক দেশের রাষ্ট্রনায়ককে নানান ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছে। এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য অন্য কোন দেশ যদি ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করে। তাহলে বাংলাদেশ যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে অর্থনৈতিকভাবে ও আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করার জন্য। যত ষড়যন্ত্রই হোক এদেশের জনগণ আমাদের সাথে রয়েছে। জনগণকে সাথে নিয়ে আন্তর্জাতিক, দেশীয় ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবেলা করবো। ভিসানীতি বা স্যাংশন যে দিয়েছে, তা ব্যক্তিগত কয়েকজনকে দিবে। ১৭ কোটি মানুষের দেশে কয়জনকে তারা স্যাংশন দিবে। কয়জন মানুষ আমেরিকা যায়, গুলশান-বনানীর বড় লোকের ছেলেরা যায়। তারা না যেতে পারলে বাংলাদেশের কোন বড় ক্ষতি হবে না। দুই-একজন মন্ত্রী না গেলেও কোন ক্ষতি হবে না। আমরা জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। ভিসা নিয়ে আমেরিকা যেতে পারবো না। এটা আমাদের কাছে কোন বিষয় না। দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি। আমাদের কাছে কোন অস্ত্র ছিল না, তাদের কাছ থেকে ট্যাংক, কামান, বন্দুক ছিনতাই করে আমরা যুদ্ধ করেছি। আন্তর্জাতিক বিশ্বের অনেক দেশ আমাদের পক্ষে ছিল। আমেরিকার জনগণ আমাদের পক্ষে ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়। ইউরোপের অনেক দেশের সরকার আমাদের পক্ষে ছিল।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত যদি ক্ষমতায় আসার জন্য আবারো জ্বালাও পোড়াও করতে চায়। বিএনপি আবার আন্দোলন, আগুন সন্ত্রাসের পায়তারা করছে। আবার যদি তারা হরতাল দেয়, ট্রাকে আগুন দেয় তাহলে তাদের সময়োচিত শিক্ষা দেয়া হবে। বিএনপি যতই লম্ফ ঝম্ফ করুক সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন হবে। গণতন্ত্রের অর্থ এই নয়, যা খুশি তাই করবেন। যা খুশি তাই করতে পারবেন না। মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। মানুষের ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি, শপথ নিয়েছি সুন্দরভাবে দেশ চালাবো। যারা আবার হুমকি দিচ্ছে, আগুন সন্ত্রাস করে দেশকে অস্থিতিশীল করবে, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নষ্ট করবে, তাদের সময়োচিত শিক্ষা দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এই নির্বাচনকে বানচাল ও নষ্ট করার জন্য একটি বড় রাজনৈতিক দল নানান হুমকি ও ষড়যন্ত্র করছে। আজ বিক্ষোভ, কাল পদযাত্রা, মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচির হুমকি দিচ্ছে। তারা অক্টোবর মাসে নাকি তাদের চূড়ান্ত খেলা ও কর্মসূচিতে যাবে। আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে ১৩, ১৪, ১৫ সালে দেশে যে সহিংসতা, সন্ত্রাস তারা করেছে। বিএনপি যে হুমকি দিচ্ছে এই ধরনের আন্দোলনে যদি তারা আবার যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মোকাবেলা করবে। এবং আমরা রাজনৈতিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হয়ে বিএনপির সকল জঙ্গি কর্মকান্ড, সহিংসতা করতে দেব না। সর্বাত্মক চেষ্টা করব রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য। আগামী তিন মাসের মধ্যে যে নির্বাচন আসছে। সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। পৃথিবীর মানুষের কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। দেশের জনগণ যদি আরেকবার শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে আবার ভোট দেয়, তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং উন্নয়নের সেই ধারা অর্থনৈতিকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অব্যাহত থাকবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশের সকল ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর। কৃষি, বন, রাস্তাঘাট, পদ্মা সেতু, আইসিটি কম্পিউটার এমন কোন সেক্টর নাই যেখানে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয় নাই। যা আজকে সারা পৃথিবীতে নন্দিত হচ্ছে প্রশংসিত হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। কৃষিবিদ এবং কৃষিমন্ত্রী হিসেবে মনে করি বৃষ্টি হলো কল্যাণের, মঙ্গলের ভালো ফসলের জন্য আর্শিবাদ। কাজেই বৃষ্টি হলে আমি খুশি হই। বৃষ্টি আরো বেশি হওয়ার কথা ছিল। সেই বৃষ্টি হয় নাই, এই বৃষ্টি একটু বেশ দেরিতে হওয়াতে বীজতলার একটু ক্ষতি হবে। বাংলাদেশে এখন সেচ নির্ভর কৃষি। বিশেষ করে বোরো ধান সম্পূর্ণ সেচ নির্ভর একটি ফসল। অন্য ফসল শীতকালে, শুষ্ক মৌসুমে সেচ নির্ভর। এই সেচের পানি কোথা থেকে আসে? বৃষ্টির পানি নিচে গিয়ে জমা হবে। সেটাই আমরা আবার মেশিন দিয়ে তুলি। বৃষ্টির পানি এবং বন্যার পানি দিয়েই আমাদের যে পানিরস্তর সেটা উপরে উঠে আসে। কাজেই বৃষ্টি বেশি হলে একটু ক্ষতি হলেও লাভ অনেক বেশি।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাহাব উদ্দিন বলেন, সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২২ ভাগ করতে পেরেছি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় ২৫ ভাগ করতে চেষ্টা করছি। সামাজিক বনায়নের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। দেশে করাতকল অবৈধভাবে চলছে। তবে কিছু হাইকোর্টে মামলা থাকার কারণে সমস্যা হচ্ছে। সেই মামলার জবাব দিতে হবে কোর্টের মাধ্যমে। অবৈধভাবে যে কয়লা উৎপাদন হয় সে বিষয়ে নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের এমপি, পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আইরিন আক্তার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান, মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শরীফ আহমেদ নাসির ও যষ্ঠিনা নকরেক, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মীর ফরহাদুল আলম মনি, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম প্রমূখ।