স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলনের ৪ মাস পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়নি। এদিকে ঘোষিত আংশিক ৫ সদস্যের কমিটি দিয়ে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে জেলা যুবলীগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অপরদিকে জেলা যুবলীগের কমিটির বিভিন্ন পদে স্থান পেতে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে ও জেলায় বিভিন্নভাবে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা যুবলীগের ওই কমিটিতে স্থান পেতে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত পরিবারের চিহ্নিত সদস্যরাও জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
দলীয় সূত্র টাঙ্গাইল নিউজকে জানায়, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী যুবলীগের কমিটিতে স্থান পেতে সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মী জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহী হয়েছেন প্রায় পৌনে চারশ’ জন। জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, মূল দল আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এর যেকোন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনে পদ পেতে এখন অনেকেই মরিয়া। এজন্যই এতো বেশি সংখ্যক জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে। জেলা আওয়ামী যুবলীগ সূত্রটি টাঙ্গাইল নিউজকে আরও জানায়, গত (২৭ মে) টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের সম্মেলনের চারদিন পর গত (৩১ মে) কেন্দ্র থেকে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটির ৯৬টি পদ এখনও শূণ্য রয়েছে। এই পদ পূরণ করে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত জুন মাসে পদ প্রত্যাশীদের কাছে জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। এরপর জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে বিভিন্ন পদের জন্য ৪৬০টি জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়ে।
সবচেয়ে বেশি জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে- সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য। ১০টি সহ-সভাপতি পদের বিপরীতে ১৫০ জন, দুইটি যুগ্ম-সম্পাদক পদের বিপরীতে ১২০ জন এবং চারটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য শতাধিক জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন যুবলীগ নেতারা। জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়া নেতাদের মধ্যে বিগত কমিটির অনেক নেতা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা যেমন রয়েছে। তেমনই দল ক্ষমতায় আসার পর অন্য দল থেকে আসা অনেকেই রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া জেলা যুবলীগের ওই কমিটিতে স্থান পেতে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত পরিবারের চিহ্নিত সদস্যরাও জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার পর পদ প্রত্যাশিরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নেতাদের সাথে লবিং করছেন। পদ প্রত্যাশিরা নেতারা টাঙ্গাইল নিউজকে জানান, তারা রাজনীতিতে নিজেদের অবদান ও পারিবারিক-রাজনৈতিক অবস্থান উল্লে¬খ করে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা টাঙ্গাইল নিউজকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে দল ক্ষমতায় রয়েছে। তাই সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের পদ পেতে আগ্রহীর সংখ্যাও বাড়ছে। এজন্যই আওয়ামী যুবলীগের পদ পেতে এতো বেশি জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে। টাঙ্গাইল সরকারি মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ শামসুল হুদা টাঙ্গাইল নিউজকে জানান, রাজনৈতিক ও সামাজিক দুর্বৃত্তরা সব সময় ক্ষমতাসীন দলে আশ্রয় নেন। তারা তাদের অপকর্ম নির্বিঘেœ করার জন্য ক্ষমতাসীন দলের পদ-পদবি ব্যবহার করেন। এমন কোন দুর্বৃত্তরা যাতে কমিটিতে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইম তালুকদার বিপ্লব টাঙ্গাইল নিউজকে জানান, আওয়ামী যুবলীগ এখন অনেক বেশি সুশৃঙ্খল ও সংগঠিত। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও যোগ্য নেতৃত্ব হাল ধরেছেন। তাই যুবলীগের প্রতি তরুণ-যুব কর্মীদের আগ্রহ বাড়ছে। এজন্যই আওয়ামী যুবলীগের পদ পেতে এতো বেশি সংখ্যক নেতা জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। আমরা প্রস্তাবিত পদ আকারে নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠাব। এখনও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কোন অবস্থাতেই বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত পরিবারের চিহ্নিত সদস্যদের নেয়া হবে না।
জানা যায়, দীর্ঘ নয় বছর পর গত (২৭ মে) টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজে কেন্দ্রীয় নেতারা পদ প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। তবে ওই দিন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। সম্মেলনের চারদিন পর গত (৩১ মে) কেন্দ্র থেকে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে মাসুদ পারভেজকে সভাপতি এবং আবু সাইম তালুকদার বিপ¬বকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এছাড়া সহ-সভাপতি পদে মনিরুজ্জামান মিন্টু, যুগ্ম-সম্পাদক পদে নুর মোহাম্মদ সিকদার মানিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের নাম ঘোষণা করা হয়।