
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে গত সাড়ে ৪ বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এ দুই উপজেলার রাস্তাঘাট পাকাকরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ, নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, নদীর প্রবাহ সচল রাখার জন্য ড্রেজিং, চরাঞ্চলে বিদ্যুতায়ন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ হাটবাজার, প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতে নানামুখী উন্নয়ন হয়েছে। গ্রামগুলো রূপ নিচ্ছে শহরে। প্রত্যন্ত গ্রাম হলেও এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। কয়েকটি মেগা প্রকল্পসহ বাস্তবায়িত হয়েছে অসংখ্য প্রকল্প। এছাড়া উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও কোটি কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্প। প্রস্তাবিত রয়েছে অর্থনৈতিক জোনসহ নানা প্রকল্প।
ভূঞাপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিই যমুনা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল। বৃহৎ জনগোষ্ঠী এসব চরাঞ্চলে বসবাস করে। তাদের শিক্ষাদীক্ষা জীবনমান অত্যন্ত নিম্নমুখী ছিল। নদীভাঙন, বন্যা, খরা এদের নিত্যসঙ্গী। এসব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নেয় বর্তমান সরকার। গোপালপুর উপজেলার কাউলীবাড়ী ব্রিজ হতে অর্জুনা পর্যন্ত নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা। তৃতীয় দফায় সেটি বলরামপুর পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করা হয়। আর এ সুবিধা পাচ্ছে দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ। ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে প্রাচীনতম নলিন বাজার, কুঠিবয়ড়া বাজার ও ভূঞাপুর-তারাকান্দি আন্তঃজেলা সড়ক। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির জানান, ভাঙন রোধে আরও মেগাপ্রকল্প আমাদের হাতে রয়েছে।
খুব দ্রুতই বলরামপুর হতে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত বাকি অংশ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া যমুনা সেনানিবাসের উজানে নদী তীরবর্তী এলাকায় অর্থনৈতিক জোন নির্মাণ করা হবে। সেখানেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। প্রমত্তা যমুনা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙনরোধে এবং নদীর মাঝ বরাবর ক্ষীণকায় পানির প্রবাহকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল রাখার লক্ষ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে মেগা প্রকল্প। ড্রেজিং করা হয় জামালপুরের শেষাংশ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর ১০ কিলোমিটার উজান পর্যন্ত ৯.১২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ে ব্যয় হয়েছে ৫৩৫ কোটি টাকা।
এসব চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে যমুনা নদীর তলদেশ ভেদ করে বিদ্যুতায়িত করা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৪শ’ পরিবারের ঘরে ঘরে জ¦লছে বিদ্যুতের আলো। এসব চরাঞ্চলের মানুষের ভরসা ছিল কেরোসিনের কুপি, সেখানে এখন বিদ্যুতের আলোয় জ¦ল জ¦ল করছে। এ যেন চরাঞ্চলের মানুষের কাছে রূপকথার গল্প। আর এ কারণে এসব অঞ্চলে কর্মক্ষণ বাড়ছে প্রায় দ্বিগুণ। গড়ে উঠেছে ছোট ছোট শিল্প কারখানা, খামার, হস্তশিল্পসহ নানা উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান। বদলাতে শুরু করেছে অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট। বাড়ছে শিক্ষার হার। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে স্বাস্থ্য-সংস্কৃতিতে। এ যেন বিপ্ল¬বী পরিবর্তন ঘটেছে। নতুন করে যুক্ত হতে চলেছে ভূঞাপুরের নিকারাইলে আরেকটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২ কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে।
নির্বাচনী উপজেলা দুটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন হয়েছে। সম্প্রতি ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কটি প্রশস্থ করে দুই পাশে প্যালাসাইডিং করে আন্তর্জাতিকমানের সড়ক নির্মাণ করা হয়ছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩০৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। যা জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগযোগ ব্যবস্থা সুদৃঢ হয়েছে। ভূঞাপুর-চরগাবসারা সড়কে ১০টি খতিগ্রস্থ সেতুসহ সড়ক সংস্কার ও পুননির্মাণ করা হয়েছে। ভূঞাপুর হতে ফলদা হয়ে গোপালপুর এবং ভূঞাপুর হতে মির্জাপুর হয়ে গোপালপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়ক উন্নীত করা হয়েছে। ১০৬ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে গোপালপুর-বাউশী আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্থ ও উন্নীতকরণ করা হয়েছে।
গোপালপুর-বাউশী সড়কে ৪টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন হয়েছে। এসব রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় ব্রিজ-কার্লভাট। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ এবং ভূঞাপুর শহর যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি শুরু হয়েছে ভূঞাপুর শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণকাজ। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা।
উপজেলা দুটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দুই উপজেলায় ১৪টি কলেজের মধ্যে দুই সরকারিকরণসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ তলাবিশিষ্ট আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ আসনে ৭৫টি উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে গোপালপুর সুতি বিএম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সরকারি করণ করা হয়েছে। অধিকাংশ উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৩ কোট টাকা ব্যয়ে ৪ তলাবিশিষ্ট আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আসনটিতে ৩২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই ১, ২ ও ৩ তলা আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মাদ্রাসাগুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক ভবন।
শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় মনোযোগী করার লক্ষ্যে উভয় উপজেলাতে নির্মাণ করা হয়েছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। এছাড়া ৬৯৭টি মসজিদ, ৬৩টি মন্দিরসহ কবরস্থান, ঈদগা মাঠগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। উপজেলা দুটিতে এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে উন্নয়ন হয়নি।
এসব বিষয়ে টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির টাঙ্গাইল নিউজকে বলেন, ভূঞাপুরে বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তরাংশে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৯শ’ একর জমির ওপর এ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০২.০২ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষের দিকে। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে টাঙ্গাইল তথা আশপাশের জেলাগুলোতে শিল্প-বাণিজ্যের সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।