
সাদ্দাম ইমন ॥
নরম কাদা-মাটি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল তিল করে গড়ে তোলা দশভুজা দেবী দুর্গার প্রতিমায় ভরে উঠেছে প্রতিটি মন্ডপে মন্ডপে। শিল্পীর নিপুণ হাতে তৈরি করেন দেবী দুর্গাকে। এ যেন প্রতিমা শিল্পীদের মায়ার বাঁধন। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর দিগন্ত জুড়ে কাশফুল জানান দিচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসবের। প্রকৃতি যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। একটু একটু করে দেবী দুর্গা রূপ নিচ্ছেন নিজ অবয়বে। নানান রঙ আর তুলির আঁচরে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীর প্রতিচ্ছবি। তাই যেনো ঘুম নেই প্রতিমা শিল্পীদের। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা। রঙের আঁচড় আর সাজসজ্জায় দুর্গাদেবীকে সাজাতে শেষ মুর্হুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের প্রতিমা শিল্পীরা। আগামী (১৯ অক্টোবর) পঞ্চমী পূজার মধ্যে দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী (২৪ অক্টোবর) বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দুর্গা পূজা।
টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এক হাজার ২৮৪টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলার সদর উপজেলার পূজামন্ডপে ২১৫টি, মির্জাপুরে ২৪৩টি, বাসাইলে ৬৫টি, নাগরপুরে ১৩৩টি, দেলদুয়ারে ১৩০টি, গোপালপুরে ৫৬টি, ভূঞাপুরে ৪১টি, কালিহাতীতে ১৯২টি, ঘাটাইলে ৮১টি, সখীপুরে ৩৭টি, মধুপুরে ৫৪টি ও ধনবাড়ীতে ৩৭টি পূজাম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ছিল ১২৬৭টি ও চলতি বছর ১২৮৪টি। গত বছরের তুলনায় ১৭টি পূজামন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তারটিয়া পালপাড়া, পূর্ব আদালত পাড়া, বাসাখানপুর পাল পাড়া, প্যারাডাইস পাড়াসহ প্রতিটি মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। মাটির কাজ শেষ করেছেন এখন রং তুলির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আবার কেউ রং মিশে দিচ্ছেন। তাদের যেনো ধম ফেলার ফুসরত নেই। রাত দিন কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা। সদর উপজেলার তারটিয়া পাল পাড়া এলাকার প্রতিমা শিল্পী পরিমল পাল বলেন, এ বছর পাঁচটি প্রতিমা করছি টাঙ্গাইলে ৩টি, ঢাকায় ১টি ও বরিশালে ১টি। রং তুলির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। আমাদের কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রতিমা শিল্পী সুজয় পাল বলেন, রং তুলির কাজে আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। রংয়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে। রাতদিন পরিশ্রম করে কাজ শেষ করছি। এই কাজ আমাদের বংশ পরম্পরায় থেকে এসেছে। আমার দাদা করছে, বাবা করছে, এখন আমি করতেছি। এবছর রংয়ের প্রচুর দাম, রংয়ের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। আমরা যে পারিশ্রমিক পাচ্ছি। সেই পারিশ্রমিকে আমাদের হচ্ছে না। আমাদের আরও পারিশ্রমিক হলে ভালো হতো পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারতাম।
আরেক প্রতিমা শিল্পী হেমন্ত পাল বলেন, আমরা প্রতিমাতে যে রং ও মাটি ব্যবহার করি। এই রংয়ের দামটা বেশি। এ বছর পাঁচটি প্রতিমা তৈরি করেছি। গত বছরের চেয়ে এ বছর রংয়ের দাম, মাটির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যে পরিশ্রম করি সে অনুযায়ী পারিশ্রমিক পায় না। রংয়ের দামের তুলনায় আমাদের পারিশ্রমিক হয় না। তবুও কাজটি করি ফুটিয়ে তুলার জন্য সবাইকে আনন্দ দেওয়ার জন্য।
টাঙ্গাইল পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুণ ঝন্টু বলেন, এ বছর জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১২৮৪টি পূজামন্ডপে পূজা হবে। প্রতিটি পূজামন্ডপে ৫০০ কেজি করে জি.আর চাউল দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন, রাজনীতিবৃন্দদের সাথে আমাদের আলোচনা সভা হয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধি সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করলে টাঙ্গাইলে প্রতি বছরের মতো এ বছরও সুন্দরভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, পূজার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে নেয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। প্রতিটি পূজা মন্ডপে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়াও মোবাইল টিম ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন। পূজারীদের বলে দেওয়া হয়ে প্রতিটি মন্দিরে মন্দিরে যেন নামাজের সময় সূচি টাঙানো হয়। সবার সহযোগিতায় প্রতি বছরের মতো এ বছরও সুন্দরভাবে পূজা সম্পূর্ণ হবে।