আব্দুল লতিফ, ঘাটাইল ॥
শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদণ্ড, তবে শিক্ষককে বলা হবে শিক্ষার মেরুদণ্ড। শিক্ষক হলেন ন্যায়-নীতি আর আদর্শের প্রতীক। এরই বাস্তব প্রমাণ ঘাটাইলের মমরেজ গলগন্ডা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ খান। স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষায় অবদান রেখেও যে আঞ্চলিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা যায়, আবু হানিফ খান স্যার তেমনই একজন ব্যক্তি। নানা প্রতিকূল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল অনগ্রসর অঞ্চলে শিক্ষার হার কম হওয়ার কারণ ছিল সচেতনতা ও সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব। এরই মাঝে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে যে কয়েকজন ব্যক্তির অবদান অনস্বীকার্য, তাদের মধ্যে অন্যতম শিক্ষক আবু হানিফ খান।
আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে এবং সার্বিক সমাজ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের পূর্ব শর্তরূপে শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেই এই স্বনামধন্য শিক্ষক ব্রতী হয়েছিলেন জ্ঞান বিতরণের মহৎ দায়িত্ব পালনে। তার জন্ম ১৯৬৫ সালের ৩০ এপ্রিল ৮নং দেওপাড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ভোজদও গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে নারাঙ্গাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু হয় ভবনদও উচ্চ বিদ্যালয়, সেখান থেকে ১৯৮০ সালে এস.এস.সি, ঘাটাইলের জিবিজি কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে এইচ,এস,সি এবং ১৯৮৭ সালে জিবিজি কলেজ থেকে বি,এ পাশ ও ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ১৯৯৯ সালে বিএড পাশ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষকতার পেশায়। শিক্ষক আবু হানিফ খান ১৯৯২ সালের পহেলা মে ঘাটাইলের বীরবাসিন্দা ভোজদও দাখিল মাদ্রাসায় সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১৪ সাল থেকে অদ্যাবধি মমরেজ গলগন্ডা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অত্যন্ত সুনামের সহিত পালন করে আসছেন। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে নীতির প্রশ্নে তিনি অটল ছিলেন। ফলে তার সব ছাত্রছাত্রীর কাছে ছিলেন আদর্শ ও নীতির মূর্তপ্রতীক।
বিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মকাণ্ডে তার ওপর বিদ্যালয় প্রশাসনের ছিল গভীর আস্থা ও নির্ভরতা। ছাত্রছাত্রীদের ছিল অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধা। শিক্ষকতা জীবনে তিনি এ অঞ্চলের গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করে চলেছেন। চিন্তায় ও মননে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক দলাদলির ঊর্ধ্বে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। যে জ্ঞানের প্রদীপশিখা তিনি এ অঞ্চলে প্রজ্বলিত করে রেখেছেন, তার ঋণ শোধ করার মতো নয়। স্যার আবু হানিফ খান ব্যক্তিগত জীবনে তিন ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। শিক্ষক আবু হানিফ খান ছাত্রজীবন থেকেই সমাজ সেবামূলক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। এলাকার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, করস্থান, ঈদগাহ সম্প্রসারন ও উন্নয়ন কাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সমাজের তরুণ সমাজকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার পেছনে অবিরাম প্রয়াস করে যাচ্ছেন এই মহৎ হৃদয়ের মানুষটি। তাছাড়া এলাকায় মাদক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিশেষ অগ্রনী ভুমিকা পালন করে আসছেন এই জাতির মেরুদণ্ড ন্যায়-নীতি আর আদর্শের প্রতীক শিক্ষক আবু হানিফ খান।