স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঘাটাইল থেকে টাঙ্গাইল শহর ঘন্টা খানেকের পথ। এই এক ঘণ্টা সময়েই এক শিশুর বয়স ৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ বছর। এফিডেভিটের মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে কাগজকলমে বিয়ের উপযুক্ত করা হয়েছে। গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চলছিল শিশুটিকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর প্রস্তুতি। তবে বিষয়টি মানতে পারেননি শিশুর চাচা। তাই বিয়ের দিন সকালে ইউএনও বরাবর আবেদন করে বিয়ে বন্ধের দাবি জানান তিনি। যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে বিয়ে বন্ধ করে শিশুটির মাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঘটনাটি ঘটেছে ঘাটাইল উপজেলার পোড়াবাড়ি গ্রামে।
সরেজমিন কথা হয় মেয়েটির মা এবং চাচার সঙ্গে। তারা জানান, মেয়েটি স্থানীয় মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। সংসারের কর্তৃত্ব মায়ের হাতে। মা ছোট্ট মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন পাশের গ্রাম নাগবাড়ীর খোরশেদ আলীর ছেলে আলম মিয়ার সঙ্গে। মেয়ের বয়স বাড়ানোর জন্য আনজু মিয়া নামে একজনের সহযোগিতা নেন। টাঙ্গাইল গিয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করেন গত (৩০ সেপ্টেম্বর)। এতেই শিশুর বয়স ৯ বছর থেকে হয়ে যায় ১৮ বছর। তিন লাখ টাকা কাবিনে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ের কাজও সম্পন্ন করা হয় ওই দিন। ছেলে আলম মিয়ার জন্ম সনদেও দেখা যায় তার বয়স ১৬ বছর। দু’জনের বয়সই অপ্রাপ্ত। এফিডেভিটের কাগজপত্রে সিলসহ সই রয়েছে টাঙ্গাইল জজকোর্টের অ্যাডভোকেট এ কে এম জিন্নাহর। প্রতিবেদকের কথা হয় আইনজীবী এ কে এম জিন্নাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার মক্কেল এসে বললেন মেয়ের বয়স ১৮ বছর। এটা শুনে আমি করে দিছি। আর মেয়ে বোরকা পরে এসেছিল। তাই বুঝতে পারিনি। এফিডেভিট করার ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন লাগে কি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জন্মনিবন্ধন কোনো বিষয় না।
মেয়ের চাচার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তাঁর ভাতিজির বয়স বাড়িয়ে অন্যায়ভাবে খোরশেদ আলী তাদের বাড়িতে উঠিয়ে নিতে চান। এলাকাবাসী বাধা দিলেও মানতে নারাজ খোরশেদ আলী। খোরশেদ আলীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এফিডেভিটের মাধ্যমে শিশুদের বিয়ে দেওয়া যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বাল্য বিয়ে নিরোধক আইন ফাঁকি দিতে আইনজীবীর মাধ্যমে এফিডেভিট করে শিশু সন্তানের বয়স বৃদ্ধি করেন অভিভাবকরা। অনেক সময় কাজীরাও টাকা-পয়সা নিয়ে গোপনে বাল্য বিয়ে দিয়ে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাল্য বিয়ের বিষয় প্রকাশ্যে আসে না। বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।
টাঙ্গাইল জজকোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এস আকবর খান বলেন, নোটারি পাবলিক এটা অন্যায় করেছে। কোর্ট এফিডেভিট করার সময় অবশ্যই মেয়ের জন্মসনদ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দেখতে হবে।
এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর কুমার দাস জানান, নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে করা বিয়ের কোনো বৈধতা নেই। ছেলেমেয়ে উভয়েই অপ্রাপ্ত বয়স্ক।
ঘাটাইলে বিয়ের আগে এফিডেভিটে শিশু হয়ে গেল তরুণী
১৪৮ Views