হাসান সিকদার ॥
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনায় রয়েছেন টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সিদ্দিকী পরিবারের চার ভাই। এ পরিবারের দুই সন্তান জাতীয় রাজনীতির হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম)। এদের মধ্যে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে লড়বেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর-বাসাইল) আসন থেকে লড়বেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম)। এছাড়াও তাদের ছোট দুই ভাই টাঙ্গাইল-৫ (সদর) ও টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন মুরাদ সিদ্দিকী এবং টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়বেন বলে নাম শুনা যাচ্ছে শামীম আল মনছুর আজাদ সিদ্দিকীর। এছাড়াও একই আসন থেকে নাম শুনা যাচ্ছে সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সহধর্মিণী লায়লা সিদ্দিকীর কথাও।
জেলার রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে টাঙ্গাইলে সিদ্দিকী পরিবারে চলছে গৃহদাহ। মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই গৃহদাহের সূত্রপাত। টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নির্বাচনে প্রার্থীতা ও সিদ্দিকী পরিবারের প্রভাব, ক্ষমতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োগের জন্য এই পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে টাঙ্গাইলের রাজনীতির মাঠ গরম করে তুলেছেন। যা প্রকাশ্যে মাঠে-ময়দানে একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে ও মানুষ জানতে পারছে। তাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইলের রাজনীতির অনেক অজানা খবর বেড়িয়ে আসছে।
জানা যায়, লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে দীর্ঘদিন বিরোধ ছিল ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকীর। বর্তমানে সে বিরোধও আর নেই। একাধিক অনুষ্ঠানে দুই ভাইকে এক মঞ্চে দেখা গেছে। চলতি বছরের গত (২৪ জানুযারি) মুক্তিযুদ্ধকালীন কাদেরিয়া বাহিনীর বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেওয়ার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এমপি। সরকার ও দলের পক্ষ থেকে এই দুইজন আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর (বীর উত্তমের) অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত দলের সভাপতি মন্ডলীর সাবেক সদস্য ও কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীও অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ না দিলেও একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতির কারণে রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জোট হচ্ছে।
এদিকে, গত বছরের (২৩ ডিসেম্বর) কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বপরিবারে গণভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তারপর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যাচ্ছেন। ওই সাক্ষাতের পর এটিই ছিল কাদের সিদ্দিকীর টাঙ্গাইলে প্রথম কোনো সভা হয়। সম্প্রতি কালিহাতীতে একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন লতিফ সিদ্দিকী। ফলে তিনি আবারও দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী বলেন, সময় ও জাতির প্রয়োজনে তাঁকে দলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সিদ্দিকী পরিবারের রাজনীতি বর্তমানে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী-
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর বহিষ্কৃত সদস্য এবং সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দীর্ঘদিন পর নিজের নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলের কালিহাতী-৪ আসনে গণসংযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে ২০টি গাড়িবহর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। দীর্ঘদিন নিস্ক্রিয় থাকার পর নতুন করে রাজনীতিতে ফেরায় কালিহাতীতে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতী আসন থেকে ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মন্ত্রিত্ব পান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েই এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে একটি সভায় হজ, তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। তখন তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দেশে ফেরার পর তাঁকে কারাগারেও যেতে হয়। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। সর্বশেষ বিগত ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তিনি অবস্থান ধর্মঘট করেন। পরে নির্বাচন থেকে সরে যান। এ ঘটনার পর থেকে কালিহাতীতে তিনি নিস্ক্রিয় ছিলেন। প্রায় পাঁচ বছর পর তিনি কালিহাতীতে গণসংযোগ করেছেন।
লফিত সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকরা বলেন, তাঁর ভাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যাচ্ছে। সেই জোট থেকেও তিনি প্রার্থী হতে পারেন। তবে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি নির্বাচন করার জন্য আসিনি। বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করবে। আমি মনে করি এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আমার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমি এসেছি। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। তিনি আরও বলেন, কালিহাতীতে যারাই আওয়ামী লীগের লোক, স্বাধীনতার পক্ষের লোক, তাঁদের বলতে এসেছি, তোমরা সতর্ক হও, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হও। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি আঘাত হানার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করছে আন্তর্জাতিক কিছু শক্তি। যারা ’৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিরোধিতা করেছে। তারা বাংলাদেশে তাদের মনমতো একটি সরকার গঠন করতে চাচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে চাচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কালিহাতীতে লতিফ সিদ্দিকীর গণসংযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অনেকেই মনে করছেন আগামী নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামী লীগে ফেরার বিষয়ে ওপর থেকে কোনো সংকেত পেয়েছেন। অবশ্য লতিফ সিদ্দিকী কোনো সংকেত পাননি বলে তিনি জানান।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী-
মুক্তিযুদ্ধের কাদেরীয়া বাহিনীর প্রধান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসন থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। তবে ইতোপূর্বে ১৯৯৬ সালে কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সখীপুর ও বাসাইল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৯ সালে দল থেকে বেরিয়ে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত শওকত মোমেন শাহজাহানের কাছে পরাজিত হন। বিগত ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনেও ওই আসন থেকেই পূণরায় নির্বাচিত হন শওকত মোমেন শাহজাহান। এরপর বিগত ২০০১ সালের নির্বাচনে কালিহাতী আসন থেকেও কাদের সিদ্দিকী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী আর বিএনপির প্রার্থী ছিলেন শাহজাহান সিরাজ। তবে সিদ্দিকী পরিবারের ওই দুই ভাইকে এ নির্বাচনে পরাজিত করে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক শাজাহান সিরাজ নির্বাচিত হয়ে জোট সরকারের মন্ত্রিত্ব পান। গত নির্বাচনে ঋণ খেলাপির কারণে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এ আসন থেকে তাঁর মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী বিএনপি জোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে আগামী নির্বাচনে কুঁড়ি সিদ্দিকীকে নির্বাচনে দাঁড় করাবেন না। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম নিজেই নির্বাচনে লড়বেন।
দলের একটি সূত্র জানায়, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এখনও স্পষ্ট করেননি এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটে যাবেন, না কি নিজ দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হয়েই লড়বেন? এ বিষয়টি এখনও ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একাধিক নেতা জানান, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার পর প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। জোট থেকে নাকি গামছা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন এমন সম্ভাবনা রয়েছে। তারা আরও জানান, কাদের সিদ্দিকীর আইনি জটিলতা নিরসনের প্রক্রিয়া চলছে। আশা রাখি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে তার কোনো সমস্যা থাকবে না।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি অংশ নিব। আমি দুই কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলাম, ১৩ কোটি দিয়েছি। তবুও নাকি শোধ হয় নাই। এখনো নাকি আরও ২২ কোটি পায়। এবার নিয়ত করেছি, কবে মরে যাব ঠিক নাই। এবার ওইগুলো পরিশোধ করে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পড়ব। দেখা যাক, কী হয়। মানুষেরও একটা ইচ্ছা আছে, মানুষের কাছে মাফ-মুক্তি চাইতে পারব। সেজন্য আল্লাহ যদি বিপদ না করেন, (বাসাইল-সখীপুর) আসন থেকে আমি ভোটে দাঁড়াব। সবার কাছে তিনি দোয়া চান।
মুরাদ সিদ্দিকী-
বিগত ২০০১ ও ২০০৮ সালে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে এবং বিগত ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজিত হন মুরাদ সিদ্দিকী। তিনি বিগত ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। তবে এখনো পর্যন্ত দল তাকে নেয়নি এবং দলীয় কোনো পদও পাননি। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে তিনি তার কর্মীসমর্থকদের নিয়ে সভা, সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও জনসভা করে চলেছেন। এদিকে গত বছর মুরাদ সিদ্দিকী তার বিশাল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগদান করেন। তারপর থেকে তাকে নিয়ে জোড়ে সোড়ে চলে আলোচনা। মুরাদ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন এবং পদ পাচ্ছেন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলেন। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট মাসে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয় সেখানে মুরাদ সিদ্দিকী দলে ও কমিটির কোথাও স্থান পাননি। এরপর তার কর্মী-সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েন।
তার একাধিক ঘনিষ্ঠ কর্মীরা বলেন, ভেবেছিলাম মুরাদ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে জায়গা পাবে। কিন্তু দলে তাকে রাখা হয়নি। আশা করি দ্বাদশ নির্বাচনে শেখ হাসিনা সরকার মুরাদ সিদ্দিকীকে মনোনোয়ন দিবেন। টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের জনগণ তার পাশে আছে। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। এছাড়া মুরাদ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। সেখানে প্রায় প্রতিদিনই সভা-সমাবেশ করে চলেছেন। সে তার অবস্থান পরিষ্কার না করায় তার কর্মীসমর্থকরা দ্বিধাদন্দের মধ্যে পড়েছেন।
এদিকে, গত (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ২০টি গাড়িবহর নিয়ে দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়ায় শাহান শাহ্ আদম কাশ্মিরীর মাজারে যান লতিফ সিদ্দিকী। সেখানে যাওয়ার পথে লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরের কয়েকটি গাড়িকে তাঁর ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকীর সমর্থকেরা আটকে দেন বলে অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে জেলায় জোড়ে সোড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, ওই দিন কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সাথে আছি। দল থেকে মনোনয়ন চাইব। যদি দল মনোনয়ন না দেয় তাহলে পরেরটা পরে ভাবা যাবে। টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের উন্নয়ন এবং মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। জনগণও আমার সঙ্গে আছে।
আজাদ সিদ্দিকী-
টাঙ্গাইলে সিদ্দিকী পরিবারের ছোট সন্তান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকী একসময় ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি সরকারি করটিয়া সা’দত কলেজের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন। পরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠিত হলে ভাইয়ের দলে চলে যান। বতর্মানে তিনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সাথে থেকে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। তাকে দলের (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ) নানা কমর্সূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। কালিহাতী-৪ আসন থেকে কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই শামীম আল মনছুর আজাদ সিদ্দিকীও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গামছা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন অংশ নিতে পারেন বলেন তার কর্মী-সমর্থকরা জানিয়েছেন। কাদের সিদ্দিকীর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে তার নির্বাচন করা না করা। আবার এমনও হতে পারে, বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর জন্য আসনটি ছেড়ে দিতে পারেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও আজাদ সিদ্দিকী।
এ বিষয়ে আজাদ সিদ্দিকী বলেন, দ্বাদশ নির্বাচন প্রার্থী হবো কি না সেটা পড়ের হিসেবে। আমি বড় ভাইয়ের সাথে থেকে সভা-সমাবেশগুলোতে অংশগ্রহণ করছি।
লায়লা সিদ্দিকী-
সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সহধর্মিণী লায়লা সিদ্দিকী। তিনি টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতী আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এর আগে তিনি ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এবং ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই দুটি নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী কারাবন্দি ছিলেন। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা আগামী সংসদ নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী বা তাঁর সহধর্মিণী লায়লা সিদ্দিকীকে দলের মনোনয়ন দেন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এ বিষয়ে লায়লা সিদ্দিকী বলেন, আমরা রাজনৈতিক পরিবারের মানুষ। পুরো সিদ্দিকী পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল ছিল, বর্তমানেও আছে। দল বা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেন, আমরা সে সিদ্ধান্তের মধ্যেই থাকব।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের ছাতিহাটী গ্রামটিতেই রয়েছে সিদ্দিকী পরিবারের পৈত্রিক নিবাস।