
সাদ্দাম ইমন ॥
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইলের মন্ডপগুলোতে বিষাদের শুর বেজে উঠেছে। শুভ বিজয়ার মধ্য দিয়ে মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরলেন দূর্গা তিনা শিনী দেবী দূর্গা। টাঙ্গাইলে বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিকালে আনুষ্ঠানিক পূজা অর্চনা শেষে ভক্তরা দুর্গাকে নিজ নিজ মণ্ডপ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানান। দেবী দুর্গার বিদায় উপলক্ষে ঢাকঢোল আর উলুধ্বনিতে মুখরিত ছিল বিভিন্ন পূজামণ্ডপ। পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ আর থেমে থেমে উলুধ্বনিতে সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশ। এর আগে শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীতে টাঙ্গাইলের মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছিলেন নারীরা। সিঁদুর খেলা শেষেই শুরু হয় দেবী দুর্গাকে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি। ঢাকের তালে তালে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেন বিবাহিত নারীরা। একজন অপরজনের সিঁথিতে সিঁদুর তুলে দিচ্ছিলেন তারা। অনেকে একজন আরেকজনের গালেও লাগিয়ে দিচ্ছিলেন সিঁদুরের রঙ। স্বামীর মঙ্গল কামনায় দেবীর পা ছোঁয়ানো এ সিঁদুর নিয়ে খেলায় মেতে ওঠেন তারা।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে নামে ভক্তদের ঢল। ঢাক আর শঙ্খধ্বনি। টানা মন্ত্র পাঠ। উলুধ্বনি আর অঞ্জলি। সঙ্গে ঢাকের বাদ্য, নাচ, সিঁদুর খেলা। ধান, দুর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানায় ভক্তরা। সকালে দেওয়া হয় দর্পণঘট বিসর্জন। আজ হিন্দুদের অনেকে উপবাস করেন। একদিকে বিদায়ের সুর। অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। মণ্ডপে মণ্ডপে দশমী পূজার পর সিঁদুর খেলা শুরু হয়। দুপুরের পর দেবী দুর্গাকে এক বছরের জন্য বিদায় দিতে গিয়ে বিষাদে ভরে ওঠে সবার মন।
টাঙ্গাইল পৌর শহরের পদ্মমনি পুকুরে এসে সমবেত করে প্রতিমা। পরে একে একে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। এর আগে ভক্তরা নেচে গেয়ে পৌর শহরের পদ্মমনি পুকুরে নিয়ে আসে। এদিকে বিজয়া দশমী ও ঝিনাই নদীতে প্রতিমা বিসর্জন নির্বিঘ্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন, থানা পুলিশ, টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও আনসার-ভিডিপির সদস্যরা তৎপর ছিলেন।
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপি দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। চন্ডী পাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত শুক্রবার (২০ অক্টোবর) থেকে শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। হিন্দুদের বিশ্বাসে বোধনে ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ী মা উমাদেবীর আগমন ঘটে। টানা পাঁচ দিন মৃন্ময়ী রূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে আজ ফিরে যান কৈলাস পর্বত শিখরে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে।’ এবার দেবী এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে, যাবেনও ঘোড়ায় চড়ে।
টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এক হাজার ২৮৪টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২১৫টি মন্ডপে, মির্জাপুরে ২৪৩টি, বাসাইলে ৬৫টি, নাগরপুরে ১৩৩টি, দেলদুয়ারে ১৩০টি, গোপালপুরে ৫৬টি, ভূঞাপুরে ৪১টি, কালিহাতীতে ১৯২টি, ঘাটাইলে ৮১টি, সখীপুরে ৩৭টি, মধুপুরে ৫৪টি ও ধনবাড়ীতে ৩৭টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল এক হাজার ২৬৭টি ও চলতি বছর এক হাজার ২৮৪টি।