হাসান সিকদার ॥
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, বিএনপি যতোই হুমকি দিক, ২৮ তারিখ তারা কিছুই করতে পারবে না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। তারাই বিএনপিকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করবে। ২৮ অক্টোবর আন্দোলনের নামে বিএনপি যদি সন্ত্রাসের পথে যায় ও আক্রমণাত্মক হয়। তাহলে আওয়ামী লীগ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। বিএনপি হুমকি দিচ্ছে ২৮ অক্টোবর দেশকে অচল করে দিবে, ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসের পথে যায়, আক্রমণাত্মক হয়, গাড়িতে আগুন দেয়, বিদ্যুতের লাইন কাটে, রেললাইন তুলে। তাহলে আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিকে সমুচিত জবাব দেয়া হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে হবে এবং তা সুষ্ঠু, সুন্দর ও সবার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে। নির্বাচনে কারা আসল, কারা আসল না, সেটি কোন বিষয় না। তবে আমি আশা করি, বিএনপির শুভ বুদ্ধির উদয় হবে ও তারা নির্বাচনে আসবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে বিএনপি দেশকে বিদেশের উপর নির্ভরশীল করতে চায়। কারণ বিএনপির প্রভু হলো পাকিস্তান। এখনো পাকিস্তানের মায়া তাদের কাটেনি। তারা এখনো পাকিস্তানের ধারায়, পাকিস্তানের পথে ফিরে যেতে চায়। সেজন্য তাদের লক্ষ্য নির্বাচন বানচাল করা।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা অডিটোরিয়ামে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান ও তেল ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাতের সম্প্রসারণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক আঞ্চলিক কর্মশালায় কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
যে কোন মূল্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ধর্মের নামে কিছু জঙ্গি, ধর্মান্ধ, বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে। একইসাথে, নির্বাচনে যাবে না বলে আন্দোলন সংগ্রামের নামে বিএনপি নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। কাজেই, এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার বর্তমানে ক্ষমতায়। কাজেই, সরকারের মৌলিক দায়িত্ব রাজনৈতিক, সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। সরকার যে কোন মূল্যে এটি করবে। বিএনপি নাশকতা করতে চাইলে কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও যাবে। এটি মানবতার দেশ। এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোন জায়গা নেই। ধর্ম নিরপেক্ষতাই আমাদের আদর্শ। বিএনপির শাসনামলে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিলো। তারা কৃষকদের সার দিতে পারেনি। সার চাইতে গিয়ে ১৮ জন কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে। ১৮ জন কৃষককে তারা গুলি করে হত্যা করেছে। দেশে বর্তমানে কোন খাদ্য ঘাটতি ও দুর্ভিক্ষ নেই।
উচ্চ ফলনশীল স্বল্প জীবনকালীন ধানের ও সরিষার জাতগুলোকে দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য কর্মশালায় উপস্থিত কৃষির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তাগিদ দিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এক সময় দেশের খাদ্যের ঘাটতি পূরণের জন্য আমরা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা দানা জাতীয় খাদ্য চাল, গম, ভুট্টায় অনেক সফলতা পেয়েছি। এখন সবজি, ফলমুল, আলু, তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছি। দেশে ক্রমশ কৃষি জমি কমছে, মানুষ বাড়ছে। এ অবস্থায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়া খুবই কঠিন। সেজন্য, কম সময়ে অধিক ফলন ও একই জমি থেকে বার বার ফসল ফলানোর উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা স্বল্পজীবনকালীন উন্নত জাতের ধানের ও অন্যান্য অনেক ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন। যা চাষের মাধ্যমে বছরে ১টি অতিরিক্ত ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। একইসঙ্গে, ফলনও অনেক বেশি। এই জাতগুলোকে কৃষকের নিকট দ্রুত জনপ্রিয় করতে হবে। প্রতি বছর আমাদের ২২ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয়। বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশ চলে যায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তেল ফসল উৎপাদন বাড়ানো এবং বিদেশের নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। আগামী তিন বছরের মধ্যে ৫০ ভাগে নামিয়ে আনার জন্য কাজ করছে কৃষি বিজ্ঞানীরা। আমরা ইতোমধ্যেই ভোজ্যতেলের জন্য ২৫ ভাগ এলাকা বৃদ্ধি করেছি। স্বল্প আয়ুষ্কাল ও উচ্চ ফলনশীল ধান ও সরিষা আবাদ করে উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতায় অন্য ফসলের সাথে টিকে থাকার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা আনদানী নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারবো।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) আয়োজনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল আলম পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের এমপি, বিনার মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, বিএডিসির সদস্য পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন, পৌরসভার মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান, ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর ফারুক আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিনা’র কর্মকর্তা, কর্মচারী, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।