ইতিহাস ঐতিহ্যের মুক্তাগাছা মন্ডার দেশে একদিন

টাঙ্গাইল নিজস্ব মন্তব্য মধুপুর

হাবিবুর রহমান, মধুপুর ॥
দু’চোখ যে দিকে যায়, চলো মন ঘুরে আসি। সকাল দুপুর বিকেল কিংবা রাত। মনের খোরাক যোগাতে ঘুরে বেড়ানো। কখনও প্রকৃতি, কখন নদী, পাহাড়, বন কিংবা দর্শনীয় স্থান। মন একটা পাগলপারা রোগে আক্রান্ত। অযথা বসে থেকে, মনের আকাশে দুশ্চিন্তা বাড়ানোর কোন মানে নেই। অন্যের সমালোচনা আর নিজেকে জাহির করার বোকামিপনায় না থেকে ঘুরে বেড়ানো মনটা কম্পিউটারের স্কিনের মাউসে রিফ্রশ করা অনেকটা ভালো। গরীবানা হালে বেড়ানো মনটা বাঁধহীন। সাথে যদি থাকে আর দু’একটা বেড়ানো পাগল। তাহলে জমবে জমপেশ ঘুরাঘুরি। ছুটির দিনে নিয়মিত ঘুরে বেড়ানো। দুই থেকে ১০ জন পর্যন্ত বহরে মন খুলে ঘুরে বেড়ানো । ভ্রমণ পিপাসু কিছু সমমনা বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলাম জগৎ বিখ্যাত মুক্তাগাছার মন্ডার দেশে।
খেজুরেরগুড় এবং চিনির মন্ডার ঐতিহ্য ইতিহাস আর স্বাদের চিরায়িত স্বাক্ষী। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার নাম শোনেনি এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে। মুক্তাগাছা নানা কারণে বিখ্যাত।
এ মন্ডার খ্যাতি আর স্বাদের কথা শুনলে যে কারো জিভে জল এসে যায়। প্রায় ২’শ বছর ধরে মাথা উঁচু করে স্বমহিমায় স্থান করে নিয়েছে তার আপন ভুবনে। তার অবস্থান থেকে স্বাদে গুনেমানে সমৃদ্ধ এ মন্ডা আজও সুখ্যাতি ধরে রেখেছে। মন্ডার আবিষ্কারক গোপাল পালের এ মন্ডা দেশের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়ে নিজের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মুক্তাগাছার মন্ডা আসলে এক প্রকার সন্দেশ। দুধের ছানা ও চিনি দিয়ে এটি তৈরী করা হয়। মন্ডা যারা তৈরী করেন কেবল সেই কারিগররাই জানেন এটা কিভাবে তৈরী করতে হয়। ২’শ বছর আগে মন্ডার স্বাপ্নিক রাম গোপাল পাল এ মন্ডা প্রস্তুত করেন জমিদার পরিবারকে তুষ্ট করার জন্য। সেই সময়ে মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীকে মন্ডা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।মহারাজা এ মিষ্টান্ন খেয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন।
গোপাল পালের কাঠের প্রতিকী। ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে মুক্তাগাছা পৌরসভা শহরে জমিদার বাড়ির কাছেই পূর্ব দিকেই গোপাল পালের মন্ডার দোকান। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে গোপাল পাল মন্ডা তৈরী করেছিলেন। সেই সময়ের জমিদারদের খুবই পছন্দের মিষ্টান্ন ছিলো এ মন্ডা। তাদের হাত ধরেই ক্রমশ উপমহাদেশের সবখানে ছড়িয়ে পড়ে এ মন্ডার খ্যাতি।
দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ মুক্তাগাছার মন্ডা খেয়েছেন। মন্ডা তৈরির পেছনে রয়েছে অলৌকিক ঘটনা। মন্ডার স্বাপ্নিক গোপাল পাল খুবই ্ঈশ্বর ভক্ত ছিলেন। পরপর কয়েক রাতে স্বপ্নে এক সন্ন্যাসী তাকে মন্ডা তৈরির পদ্ধতি শেখান।আর সন্ন্যাসী গোপালের মাথায় হাত রেখে বলেন তোর তৈরী মন্ডা একদিন জগৎ বিখ্যাত হবে। এ আশীর্বাদ করে সন্ন্যাসী অদৃশ্য হয়ে যায়। এসব তথ্য স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে ।

সেই মন্ডার ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে দেশ জুড়ে। এ জন্য ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা কে মন্ডার দেশও বলা হয়। মন্ডা খেতে আসা লিয়াকত হোসেন জনী জানান, মন্ডা খেতে আসছেন। তার মতে, মন্ডার স্বাদ ও ঐতিহ্য তাকে মুগ্ধ করেছে।
মুক্তাগাছার গোপাল পালের প্রশিদ্ধ মন্ডার দোকানদার জানান, চিনির প্রতিকেজি মন্ডা ৭ শ’ টাকা ও খেজুর গুড়ের প্রতিকেজি মন্ডা ৮ শ’ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

 

৩৮৪ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *