সাদ্দাম ইমন ॥
অনাহারে আছি আজ কতদিন, আমাকে দেখেই হয়তো বুঝতে পারছো। ভূখা থাকতে থাকতে পেট চিপটে হয়ে আজ আমার এ ভগ্নদশা, এখন মৃত্যুর দোরগোড়ায়। এক সময় সবার আকর্ষন, দৃষ্টি থাকতো আমার দিকে। তখন কদর ও যত্ন ছিল। স্বাস্থ্যবান ও সুশ্রী চেহারায় তোমাদের মনের খাবার ধারণ করতে করতে আমি হাঁপিয়ে উঠতাম। পেট ভরে বুক ছাপিয়ে মুখ অবদি এসে যেত তোমাদের সুখ-দুঃখ হাসি-কান্না ভরা সুন্দর কথামালার পত্রগুলো।
ডাক হরকরা এসে তোমাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য খালি না করা পর্যন্ত ক্লান্তিতে থাকতাম। তবুও ভাল লাগতো তোমাদের আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা, প্রিয়জনের না বলা সব কথা বুকে ধারণ করে। সে সময় নিজেকে সফল, সার্থক মনে হতো। খালির পর আবার দ্রুত ভরে উঠত আমার বুক। নিত্য আমার কাছে ছিল তোমাদের যাতায়াত। আমি ছিলাম তোমাদের ভাল বন্ধু, কিন্তু আজ তোমরা আমার দিকে তাকিয়েও দেখ না। এক সময়ের প্রিয় বন্ধুটির কি বেহাল দশা।
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ডুবে আছে সবাই ইন্টারনেটে, এন্ড্রয়েড সেটে ফেসবুকে, চ্যাট, ম্যাসেজ ও লাইভে। ভুলে গেছো কবি গুরুর “চিঠি লেখাও এক ধরনের সুখ” এ কথাও। প্রিয়জনের খবর নিতে মনের আকুতি জানাতে এখন আর কেউ কাগজ-কলম হাতে নেয়া হয় না। সময় অপচয়ে গাইটের পয়সা খরচে ডুবে আছে সবাই চ্যাটিং-এ। আমাকে বাঁচাতে- দৈন্যদশা কাটাতে, কাগজে মনের কথা লিখে, একটু সময় আস আমার কাছে। বুকে ধারণ করি তোমাদের কথা, বেঁচে থাকি তোমাদের মাঝে, ডাক বিভাগও বেঁচে থাক পুরনো ঐতিহ্যে।
টাঙ্গাইল জেলার বেশ কিছু পোষ্ট অফিস সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, সরকারি কর্মকর্তা এখনও চাকরিতে বহাল আছে। কিন্তু পোষ্ট বক্সগুলোতে মরিচা ধরেছে। লোহা দিয়ে তৈরি পোষ্ট বক্সগুলো ভাঙ্গা। অফিসে কাজ নেই, অলস সময় কাটাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। সদর উপজেলার বাঘিল, দাইন্যা, মগড়া, হুগড়া ইউনিয়নগুলোর পোষ্ট বক্সগুলোর চিত্র এমনই। পোষ্ট বক্সটি সাটানো দেখা যায় কিন্তু অফিসগুলো তেমন কোন কার্যক্রম নেই। পোষ্ট বক্সগুলো সাটানো আছে মাছ বিক্রির টোলঘরে, স্পোটিং ক্লাবের সাথে, পরিত্যাক্ত ভবনের সাথে সাটানো আছে। স্থানীয়রা জানায়, এই বক্সগুলো তদারকির জন্য সরকারি নিয়োজিত কর্মকর্তা আছে। কিন্তু তদারকির কাজ চলছেনা। সরকারি বেতন প্রতি মাসে উঠিয়ে নিলেও সরকারি কার্যক্রম করছে না। এলাকাবাসীরা জানায়, এক সময় মানুষ দূরদূরন্তের খবর জানতো চিঠির মাধ্যমে। টাকা-পয়সা মানি অর্ডার করে দেশ-বিদেশ থেকে আদান প্রদান করতো। যুগের পরির্বতনে, কালের আর্বতনে, ডিজিটাল যুগে দীর্ঘ মেয়াদী সময়ের গন্ডি রেখে দিন দিন প্রযুক্তি সহজ হয়েছে। আর দীর্ঘ মেয়াদি প্রচলন উঠে যাচ্ছে। তবুও ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়নি।
বর্তমানে শুধু সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন অফিসিয়াল কার্যক্রমগুলো অনেক কাজ ডাক যোগাযোগের মাধ্যমে হয়। এমনকি কিছু অফিসিয়াল কাজ ডাক যোগাযোগ ছাড়া হয়না। বর্তমানে পোষ্ট বক্সগুলোতে মরিচা পড়ে আছে কিন্তু দেখার মতো লোকজনও আছে, সরকারি বেতন উত্তোলন করছে প্রতিমাসে। কিন্তু বক্সগুলো তদারকি করার মতো কেউ নেই। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে কেউ সরকারিভাবে চিঠি পোষ্ট করতে চাইলে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। আর কোথায়ও থেকে চিঠি আসলে সময় মতো ডাক পিয়নরা তা বিলি করে না। এমন কি অন্যের মাধ্যমে সংবাদ পাঠায় যোগাযোগ করার জন্য যে তার চিঠি এসেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায়, সরকারি বেতন হয় তাদের নামে। কিন্তু অফিসে কি কারণে সময় মতো পাওয়া যাবে না। এক পিয়ন উজ্জল মিয়া জানায়, বেতন সামান্য পাই, কাজও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। কি কাজ করবো সরকারি বলে তাই করি, অফিসে যাওয়া লাগেনা।