সখীপুর প্রতিনিধি ॥
টাঙ্গাইলের সখীপুরে মেয়ের সাথে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা শেফালী আক্তার। মেয়েকে বিদ্যালয়ে ও শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াতে তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। একপর্যায়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মেয়ের সঙ্গে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ইচ্ছার জোরেই এবার এসএসসি ভকেশনাল নবম শ্রেণির বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।
এই অধ্যবসায়ী নারী শেফালী আক্তার ৩৫ বছর বয়সে মেয়ের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। পড়ালেখা করে অনেক দূরে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে শেফালী আক্তার জানান, তাঁর সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছা আছে। যাতে সমাজে আর দশজনের মতো নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন। তিনি বাল্যবিবাহের শিকার হওয়ায় সময়মতো পড়তে পারেননি। কিন্তু মেয়েকে পড়াশোনা করাবেন।
জানা যায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায় শেফালী আক্তারের। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকে যায় তাঁর। এরপর কেটে যায় ২২টি বছর। ২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামী মারা যান। বড় মেয়ে সাবরিনা তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়ের দায়িত্ব তাঁর ঘাড়ে বর্তায়।
মায়ের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহের বিষয়ে মেয়ে সাবরিনা আক্তার বলেন, ভাবতে খুব ভালো লাগছে, আমরা মা-মেয়ে একই সঙ্গে এসএসসি ভকেশনাল নবম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি। এমন সুযোগ আর কজনার ভাগ্যে আসে। মা শুধু আমার মা-ই নন, তিনি ভালো একজন বন্ধুও।
শেফালী আক্তার বলেন, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকলেও অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়েকে বিদ্যালয়ে ও প্রাইভেট পড়াতে আমাকেই সঙ্গে যেতে হয়। পরে চিন্তা করি, মেয়ের সঙ্গে আমিও পড়াশোনা করব। নবম শ্রেণিতে মেয়ের সঙ্গে আমিও ভর্তি হই। ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান আমাকে পড়ার জন্য উৎসাহ দেন। একই কেন্দ্রে ও একই কক্ষে মেয়ের পেছনের বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার পরীক্ষাও ভালো হচ্ছে।
ভুয়াইদ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান বলেন, বিষয়টি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনের মতো। মানুষের ইচ্ছাশক্তি থাকলে লেখাপড়ায় বয়স (৩৫ বছর) কোন বাধা নয়। শেফালী আক্তারের এমন উদ্যোগ অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। আমরা ওই মা-মেয়ের দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করি।