
হাসান সিকদার ॥
টাঙ্গাইলের বহুল আলোচিত ধর্ষণ মামলার বাদি মির্জা আফরোজ এশার (২২) নিজ বাসা থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের (পৌর শহরের বাহিরে) করের বেতকার নিজ বাসার তৃতীয় তলায় এশার মরদেহটি পাওয়া যায়। মির্জা আফরোজ এশা করের বেতকা গ্রামের মৃত লতিফ মির্জার মেয়ে। মির্জা আফরোজ এশার (২২) মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে নিজ বাসার রুমের ভিতরে এশার শিশু পুত্রের কান্না শুনতে পান এক নারী। পরে আশপাশের লোকজনকে জানালে তারা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায়। পরে রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে ক্রাইম সিনের একটি টিম এসে মরদেহ উদ্ধার করে। পরে মরদেহটি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই কয়েকস্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রাইম সিনের টিম মরদেহ উদ্ধার করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। নিহত এশা মির্জার রুম থেকে চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধারসহ আরও বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি বলেন, আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন এশা মির্জাদের বাসায় শিশুর কান্না শুনতে পাই। পরে স্থানীয় কয়েকজনে খবর দিলে তারা পুলিশকে জানায়। পুলিশ আসলে রুমের ভিতরে গিয়ে দেখে এশার মরদেহ ফ্যানের সাথে ঝুলছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা বলা যাচ্ছে না। পুলিশ তদন্ত করলে সব বোঝা যাবে। স্থানীয় এক কলেজ ছাত্র বলেন, এশা বেশ কিছু দিন ধরে চিন্তায় ভুগছিল। বাসা থেকেও তেমন বের হয়নি। আজ সকালেও এশা অনেক কান্না করেছে। কি কারনে কান্না করেছে তা জানি না। মাঝে মাঝে সে কান্না করতো। বিকেলে শুনি এশা আত্মহত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগেও রাতে দেখেছি একটি সাদা প্রাইভেটকারে কয়েকজন লোকের সাথে সে যেন কোথায় যাচ্ছে।
নিহত এশা মির্জার বড় বোন লুনা মির্জা জানান, শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) এশার মোবাইল ফোনে আমার সর্বশেষ কথা হয়। শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরের দিকে আমার ভাইয়ের বউ আমার স্বামীকে ফোন করে জানায় এশা দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তার ছেলে অনেক কান্না করছে। দরজা ধাক্কাধাক্কি করার পরও দরজা খুলছে না। পরে আমার ভাইয়ের বউ দরজা ভাঙার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছালাম মিয়া জানান, আলোচিত ধর্ষণ মামলার বাদি মির্জা আফরোজ এশা তার তৃতীয় তলা বাসার নিজ রুমে ফ্যানের সাথে ঝুলছিল এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমরা পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করি। মরদেহটি মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগের ক্রাইম সিনের এসআই তাহের চৌধুরী বলেন, আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার পর বিস্তারিত বলতে পারবো। মরদেহ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীন বলেন, আত্মহত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্রাইম সিনের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে মরদেহটি উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে।
এদিকে চলতি বছরের গত (৫ এপ্রিল) রাতে অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় এশা মির্জা টাঙ্গাইল সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনির ও তার স্ত্রী নিগার আফতাবের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। সম্প্রতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারামুক্ত হয়েছেন। ডিএনএর রিপোর্টের সাথে আসামির ধর্ষণের আলামতের মিল পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই ও টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড়মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন নিহত আফরোজ মির্জা এশা। এ মামলাটিকে ঘিরে টাঙ্গাইলের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। মির্জা আফরোজ এশা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনও করেন।