স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের টানা তৃতীয় বারের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু টাঙ্গাইল হটাও, বাঁচাও মির্জাপুর এই স্লোগান দিয়ে টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভকে সন্ত্রাসী ও বহিরাগত উল্লেখ করেছেন। শুভ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
রবিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের লতিফপুর বড়চালা এলাকায় দুই দিনব্যাপী বাউল সংগীত অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মীর্জা শামীমা আক্তার শিফা। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, টাঙ্গাইল হঠাও, বাঁচাও মির্জাপুর। এটাই আমাদের শ্লোগান। তিনি সোমবার (২০ নভেম্বর) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের নামে সহকারী রিটার্নিং অফিসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিনের কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।
তিনি বলেন, শুভর জন্ম টাঙ্গাইলে, সে কেন মির্জাপুরের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আমরা তাকে মেনে নিতে পারি না। শুভকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে আমি যে কোন সময় পদত্যাগ করবো এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। কোন নির্বাচনে আমার ব্যর্থতা নেই। এ উপজেলার নারী-পুরুষ সকলেই আমাকে স্বচ্ছ ও সৎ মানুষ হিসেবে চিনে।
খান আহমেদ শুভ যাকাতের টাকা নেতাকর্মীদের দিয়ে বলেন, কে নিলেন তা জানা থাকা দরকার। এই বলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। ওই কাগজের উপরে খান আহমেদ শুভকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য মতামত দিলাম লিখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন। এ কাজের জন্য শুভকে চিটার বলে আখ্যায়িত করেন মন্টু। আমি ওই ওসৎ মানুষকে পরাজিত করতে পারি সেজন্য সকলের দোয়া প্রার্থনা করেন।
মীর এনায়েত হোসেন মন্টু ১৯৬৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ করেন। ১৯৭৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালের জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে তাকে রাখা হয়নি। এরপর দীর্ঘ কয়েক যুগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মন্টুর সহোদর ছোট ভাই মীর শরীফ মাহমুদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় তাকে কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে। তিনি ১৯৮৫ সালে উপজেলার শিল্পাঞ্চল এলাকার গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৯ সালের উপজেলা পরিষদে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৯ সালেও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
মন্টু তার বক্তৃতায় বলেন, আমি হয়তো শেষ হয়ে যাবো, মরে যাবো, বেশি দিন বাঁচবো না। ৪০ বছর লাগবো মন্টু তৈরি করতে। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে পাহাড়ের সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে টাঙ্গাইল হঠিয়ে মির্জাপুরকে বাঁচাতে হবে। লাল মাটির সঙ্গে বেঈমানি করবেন না। আমরা চাই এদেশের উন্নয়নের জন্য এই পাহাড়কে শহর বানাতে। আমি তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যান। ছোট কাজ করতে পারি। এজন্য পাহাড়কে শহর বানাতে পারি নাই।
এ আসনে খান আহমেদ শুভ ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাফিউর রহমান খান ইফসুফজাই সানি, মেজর (অব) এ আফিজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিটন ও সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল এমপি হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সন্ত্রাসী ও বহিরাগত খান আহমেদ শুভকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে মির্জাপুরকে বাঁচানোর জন্য টাঙ্গাইলকে হঠাতে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। এছাড়া মির্জাপুরের কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি তার পক্ষে কাজ করবেন বলে জানান। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন কি না জানতে চাইলে বলেন, চাইবো না, আমি জনগণের সাথে আছি। জনগণই আমার শক্তি।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা ফজলুর রহমান খান ফারুক এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা, আমার দাদা ও বাবার বাড়ির উপজেলার ওয়ার্শী ইউনিয়নের কহেলা গ্রামে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বাবার পরিচয়ে উপনির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। দেড় বছরের সময়কালে আমি বিনয়ের সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এমন কোন কাজ করিনি যে কারণে আমাকে কেউ সন্ত্রাসী বলতে পারবে। দলের কাছে পুনরায় মনোনয়ন চেয়েছি। মনেনায়ন দিলে নির্বাচন করবো। না দিলে যাকে মনোনয়ন দিবে তার হয়ে কাজ করবো। স্বতন্ত্র নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, কে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবে, না করবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই।