টাঙ্গাইলে চিকিৎসায় অবহেলায় মা ও নবজাতক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

অপরাধ টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর লিড নিউজ স্বাস্থ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলায় মা ও নবজাতক মেয়ে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছে তার স্বজনেরা। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে হাসপাতালের ১নং অপারেশন থিয়েটারে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর অপারেশনের দায়িত্ব থাকা ডা. সালমা জাহান ও হাসপাতালের চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়ার কনসালটেন্ট ডা. প্রনব কর্মকার গাঁ ঢাকা দেন। ঘটনার পর স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতাল প্রাঙ্গন ভারী হয়ে উঠে। পরে মা ও মেয়ের মরদেহ নেওয়াকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

নিহত প্রসূতির নাম মীম আক্তার (২০)। সে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সিঙ্গুরিয়া গ্রামের হানিফ আলির মেয়ে। তার স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেন। সে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মদনা গ্রামের বাসিন্দা। তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ঢাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মরত ছিলেন।

নিহত মীমের নানী সুমনা আক্তার জানান, মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকালে প্রসূতি মীম আক্তারের প্রসব ব্যথা উঠে। দ্রুত তাকে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যান তারা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে দুপুর ১২টার দিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মীমকে। সেখানে গাইনী বিভাগের জুনিয়ার কনসালটেন্ট ডা. সালমা জাহানের তত্বাবধায়নে দুপুর ১ টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার ২০ মিনিট পর ওই ডাক্তার মীমের পরিবারের কাছে মীমের জন্য দুই ব্যাগ রক্ত চান। স্বজনেরা রক্ত সংগ্রের জন্য হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে ছুটাছুটি করতে থাকে। এমন সময় অপারেশন থিয়েটার থেকে জানানো হয়, প্রসূতি মীম আক্তার ও তার নবজাতক কন্যা সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

স্বজনদের অভিযোগ, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিভাগের জুনিয়ার কনসাল্টটেন্ট ডা. সালমা জাহান তাদের সোনিয়া নার্সিং হোমে প্রসূতি মীম আক্তারে ডেলিভারী করার জন্য বলেন। তারা হতদরিদ্র হওয়ায় এ প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় ওই ডাক্তার সিজারিয়ান অপারেশনের সময় অবহেলা করায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের আরও অভিযোগ, অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পুর্বেও মীম আক্তার হেটে-হেটে অপারেশেন থিয়েটারে গিয়েছে। অথচ অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার ২০ মিনিটের মাথায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের মুত্যু হয়।

নিহতের খালা মাজেদা আক্তার আহাজারি করে বলেন, প্রসূতির মৃত্যুর পর জোরপুর্বক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশের ছাড়পত্র কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মা ও মেয়ের মরদেহ বের করে দেন। এ সময় হাসপাতালের লোকজন জোরপুর্বক আমাদের বের করে দিতে চাইলে আমরা বাধা দেওয়ায় আমাদের গায়ে হাত দেয় তারা

অভিযোগ প্রসঙ্গে, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কলসালটেন্ট (গাইনী) ডা. সালমা জাহান মুঠোফোনে বলেন, হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সাদিকুর রহমান ঢাকায় থাকায় তিনি গণমাধ্যমকে কোন ধরনের সাক্ষাতকার দিতে পারবেন না জানিয়ে ফোন কেটে দেন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়কের চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) ডা. প্রনব কর্মকারের মুঠোফোনে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিব করেননি।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সাদিকুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রির্পোটের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কলসালটেন্ট (গাইনী) ডা. সালমা জাহান হাসপাতালের পাশেই অবস্থিত একটি বেসরকারি ক্লিনিক সোনিয়া নাসিং হোমে কনসালটেন্ট (গাইনী) হিসেবে কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে ইতোপুর্বেও জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি মায়েদের উক্ত ক্লিনিকে নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সিজারিয়ান অপারেশন করার অভিযোগ রয়েছে।

 

৩৪২ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *