স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে আমন মৌসুমে উঁচু জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করা গেলেও বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় নিচু জমিতে আমন ধান চাষ করা সম্ভব হয় না। এসব জমি অনাবাদি থাকায় যত্রতত্র জন্মে কচুরিপানাসহ নানা জাতের আগাছা। ফলে প্রতি বছরই অনাবাদি থেকে যায় শতশত একর ফসলি জমি। এরফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় আমন ধান চাষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে নিম্নাঞ্চলের জমিগুলোতে কয়েক মাস জলাবদ্ধতা থাকারপর এখন পানি শুকিয়ে গেছে। কিন্তু রয়ে গেছে কচুরিপানাসহ বিভিন্ন জাতের আগাছা। ধানের বীজতলা ও আগাম বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যে এসব অনাবাদি জমিতে জন্মানো আগাছা অপসারণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে কৃষকদের এসব আগাছাই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগাছা পরিষ্কার করতে কৃষকের গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আমুল, বিল আমুলা, কয়েড়া ধোপাচড়া বিল, বিলচাপড়া, রুহুলী বিল, নিকলা বিল, তারাই, আনার খাঁ পাড়া, পাঁচতেরিল্ল্যা বিলসহ অসংখ্য ছোট-বড় বিল কচুরিপানাসহ নানা জাতের আগাছায় সয়লাব হয়ে আছে। বর্তমানে জমির আগাছা পরিস্কার করে পচনের লক্ষ্যে জমিতেই স্তুব করে রাখা হয়েছে। অনেকে আবার আগাছাগুলো আগুনে পুড়িয়ে জমিগুলো সরিষা চাষে উপযুক্ত করছেন। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১ বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমির আগাছা পরিষ্কার করতে খরচ হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এসব জমিতে একবারই ধান চাষ করা হয়। জমিতে পানি প্রবেশ করে ঠিকই কিন্তু বের হয় না। প্রভাবশালীরা খালগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করে রাখায় পানি নিষ্কাশন হয় না। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ মেয়াদী জলাবদ্ধতা। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে নিম্নাঞ্চলের জমি অনাবাদি থাকত না। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা জরুরি।
উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের নিকলা বিলের কৃষক শাহজাহান আলী টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, আমন মৌসুমে অথৈই পানি থাকে। তখন ধান চাষ করতে পারি না। ফলে পানিতে কচুরিপানাসহ নানা জাতের ঘাস জন্মে চট পড়ে যায়। আগাছা দমনে আগাছা কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো কাজ হয় না। এখন পানি শুকিয়ে গেছে, বীজতলা ও আগাম বোরো ধান রোপণের সময়। তাই অনেক কষ্টে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে নেমেছি। কয়েড়া গ্রামের কৃষক রাশেদ আলী টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, ঘাস ও কচুরিপানায় পায়ে কাঁদাও লাগে না। ঘাসের চট লেগে গেছে। ৩০ শতাংশ জমি ৪ দিন ধরে পরিষ্কার করছি। কিন্তু এখনো শেষ করতে পারেনি। আরও দু-তিনদিন সময় লাগবে। বন্যা ও টানা বৃষ্টির পানির কারণে জলাবদ্ধতায় এমনটা হয়। পানি নিষ্কাশনে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি। ফলে অনাবাদি থেকে যায় শতশত একর জমি, জন্ম নেয় বিভিন্ন ধরণের আগাছা।
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, বন্যা ও টানা বৃষ্টির ফলে প্রতিবছরই নিম্নাঞ্চলের অনেক আবাদি জমি অনাবাদি থেকে যায়। ফলে জমিতে কচুরিপানাসহ জন্মে বিভিন্ন আগাছা। এসব আগাছা পরিষ্কার করে জমিতেই স্তুব করে পচিয়ে ফেলতে পারলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া জমিতে আগাছা নাশক কীটনাশক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।