মধুপুর প্রতিনিধি ॥
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গাংগাইর আহাম্মদ আলী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিবদমান বিরোধের জেরে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে শিক্ষকদেরকে মারপিট করার প্রতিবাদে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি মধুপুর শাখা সংবাদ সম্মেলন করেছে। দায়ীদের শাস্তির দাবি তুলে অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (২২ নভেম্বর) উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ কালোব্যাজ ধারণ, অ্যাসেম্বিলতে নিন্দা প্রস্তাব করার কর্মসূািচ ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যবস্থা না নেয়া হলে একযোগে উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে মানববন্ধন কর্মসূচি, উপজেলা সদরে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বিরত রাখার কঠিন কর্মসূচির ঘোষণার হুমকিও দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে মধুপুর পৌর শহরের ময়মনসিংহ রোডের সমিতির নিজস্ব কার্যালয় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আউশনারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ এতে সভাপতিত্ব করেন। হামলার শিকার আহাম্মদ আলী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আতিকুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাক ছাড়াও মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নুরন্নবী সিহাব, ভবানীটেকি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বক্তৃতা করেন। শিক্ষকের মর্যাদাহানীর এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আলোকদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী ক্রন্দন কন্ঠে জানান, তিনি তার দুই শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বড় লজ্জিত। শিক্ষকের মর্যাদাহানীকর এ ঘটনা আর যেন না ঘটে।
তিনি এর আগে জানান, বিগত ৪ মার্চ প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য হওয়ার পর ওই পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে পরিচালনা কমিটিতে পক্ষ বিপক্ষ সৃষ্টি হয়। সদ্য পদত্যাগী সভাপতি ও বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কোরবান আলী বিএসসি তার পছন্দের জনৈক প্রার্থীকে সবার মতামত উপেক্ষা করে নিয়োগের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে শিক্ষকগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত দেন। এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৬ নভেম্বর দুপুরের দিকে সভাপতি কোরবান বিএসসি ভাতিজা মমিনুল ইসলাম মুকুলসহ উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিল, জিয়াউল হক রুবেল, ইকবালসহ ২০/২৫ জনের একটি দল নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ঢুকে শিক্ষকদেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও এক পর্যায়ে তারা ক্ষুব্দ হয়ে ইংরেজি শিক্ষ আব্দুর রাজ্জাক , কম্পিউটার শিক্ষক আলহাজ আতিকুর রহমান,গণিতের বুলবুল আহমেদ ও আনোয়ার হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, বিল্লালকে পেটাতে শুরু করেন।
এদিকে শিক্ষক পিটিানোর খবর শুনে পরীক্ষার কক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে পালানোর সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। অন্যরা পালিয়ে গেলেও সভাপতি কোরবান বিএসসি ছাত্রদের কাছে আটকা পড়েন। তাকে বিকেল পর্যন্ত আটকিয়ে রাখা হয়।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,শামীমা ইয়াসমীন, ওসি মোল্লা আজিজুর রহমান ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদের উপস্থিতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বিক্ষুব্দে ফেটে পড়েন। সড়কে অবরোধ বসিয়ে দফায় দফায় মিছিল করে সভাপতির পদত্যাগ দাবি করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় কোরবান বিএসসি বিক্ষোভের মুখে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। শিক্ষক পিটানোর বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতিতে সন্ধ্যার আগে বিক্ষাভকারীরা অবশেষে অবরোধ তুলে নেন।
এখনো সে উদ্যোগ দৃশ্যমান না হওয়ায় শিক্ষক সমাজ এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছেন বলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আযাদ জানান। তিনি বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে শিক্ষক সমাজ নিজেদের মর্যাদার জন্য পর্যায়ক্রমে কঠোর কর্মসূচি পালন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।