
এম কবির ॥
বাঙালির ঋতুগুলো আর আগের মতো নেই। এক সময় ছয় ঋতু ছয়টি আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হতো। দুই মাস পরপর বদলে যেত প্রকৃতি। ফলে একঘেয়ে লাগত না। এখন অবস্থা ভিন্ন। বেশিরভাগ সময় গরম গিলে খায়। কখনো দাবদাহ। কখনো ভ্যাপসা গরম। ঘামে গা ভিজে যায়। অস্বস্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ফলে শীতের জন্য ভীষণ অপেক্ষা করে থাকে সবাই। গরম থেকে মুক্তির জন্য নয় শুধু, শীত আরও অনেক কারণে প্রিয় ঋতু। পৌষের প্রথম দিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শীতকালের শুরু হয়। মাঘ মাসে তীব্রতা বাড়ে। তবে হঠাৎ করেই শীত নামে না। ধীরে ধীরে এর প্রভাব স্পষ্ট হয়। আগের ঋতু হেমন্ত ডেকে আনে শীতকে। এখন সেই সময়। হেমন্তের প্রথম মাসটি চলছে। ফলে কমতে শুরু করেছে গরম। এখন বিকেল হতেই নরম রোদ। মিষ্টি বিকেল। শীতের আলতো ছোঁয়া। যত দিন যাবে ততোই জোরালো হবে এই অনুভূতি।
অবশ্য গ্রামীণ জনপদে অনেক আগেভাগেই ঢুকে পড়ে শীত। উত্তরাঞ্চলের কথা তো কারও অজানা নয়। দেশের এ অংশেই মৌসুমের প্রথম শীত অনুভূত হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারও কার্তিক শেষ হওয়ার আগেই ঢুকে পড়েছে শীত। রাতে গ্রামীণ জনপদে শিশির ঝরছে। দেখা দিচ্ছে কুয়াশাও। সন্ধ্যার পর একটু ভারি জামা কাপড় গায়ে দিয়ে তবেই ঘরের বাইরে বের হচ্ছে মানুষজন। শীতের আগে শীত শীত এই ব্যাপারটা তারা ইতোমধ্যে উপভোগ করতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোর কথা ভেবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিগুলোও সেরে রাখছেন তারা।
টাঙ্গাইলবাসীও আগত শীতটাই বেশি উপভোগ করেন। প্রিয় ঋতুর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন সবাই। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। শীত আসছে, টাঙ্গাইলের প্রকৃতিতেও সে বার্তা স্পষ্ট। দিনে রোদ থাকলেও, বিকেলে উষ্ণতা কমছে। ফুরফুরে একটা অনুভূতি হচ্ছে তখন। রাতে, বিশেষ করে শেষ রাতে হালকা ঠান্ডা পড়ছে। ফ্যান তাই বন্ধ। কেউ কেউ কাঁথা গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছেন গায়ে। ঘুমটাও তাই গাঢ় হচ্ছে। নির্বিঘ্ন হচ্ছে। আর সকালটা শিশিরে ধোয়া। খুব ভোরে যারা ঘুম থেকে উঠছেন তারা ঘাসের ডগায়, ফুলের পাপড়িতে বিন্দু বিন্দু শিশির দেখে চমকিত হচ্ছেন। শহরের রাস্তার ধারের পিঠার দোকানগুলো দেখেও বোঝা যাচ্ছে শীত আসন্ন। ফুটপাতে দিব্যি চুলা জ্বালিয়ে বসে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। চিতই, ভাপা, তেলের পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত তারা। একদিকে চুলা থেকে তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে চলছে ফুঁ দিয়ে খাওয়া। শহরের যে কোনো ব্যস্ত এলাকায় দেখা যাচ্ছে এমন দৃশ্য।
শীতের আগমনী বার্তা পেয়ে টাঙ্গাইলে উৎসব অনুষ্ঠান আড্ডা সবই যেন নতুন প্রাণ পাচ্ছে। গরম কমে আসায় বন্ধু স্বজনেরা একে অন্যের আরও কাছে এসে বসছেন। শহরের পৌর উদ্যানে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে চলছে ক্রিকেট বিশ্লেষণ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কী বাজে অবস্থা এবার বাংলাদেশের! এর বাইরে আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির আলোচনা আছে। শীতকালে বৃষ্টি তেমন হয় না বলে উৎসব অনুষ্ঠানও এ সময় বেশি হয়। চলছে সে প্রস্তুতিও। সব মিলিয়ে দারুণ এক সময়ের অপেক্ষা এখন।