
মো. নূর আলম, গোপালপুর ।।
হেমন্তের ভোরের শিশির ভেজা ঘাস জানান দিচ্ছে নবান্নের উপস্থিতি। অগ্রহায়ণে মাঠে দোলছে সোনালী পাকাধান। তাইতো কৃষক ছুটছে কাস্তে হাতে পাকা ধান কাটতে। এদিকে মৃদু শীত আগমনি বার্তা নিয়ে এসেছে পিঠাপুলির। কবি, সাহিত্যিকদের ভাষায় যেটাকে বলে নবান্ন। নতুন ধানের পিঠা যেন এক অভিন্ন স্বাদের অনুভুতি। সমাজে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় ওরা বুঝেনা নবান্ন কি, কিন্তু শীতের আমেজ বলে দিচ্ছে পিঠাপুলির আয়োজন করতে হবে। দাওয়াত করতে হবে মেয়ে, জামাইসহ আত্মীয় স্বজন, কিন্তু ওদের নেই নিজস্ব ধানের জমি। কৃষক ধান কেটে নিয়ে গেলে ক্ষেতে পরে থাকা ধান ও ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে নতুন ধান সংগ্রহ করতে দেখা যায় হতদরিদ্র মানুষগুলোকে। উদ্দেশ্য নতুন ধানের চালে শীতের পিঠা তৈরি করতে হবে।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই নতুন ধান জোগাড় করতে দেখা যায় শিশু ও মহিলাদের। এদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ।
রামপুর চতিলা গ্রামে কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এভাবে দৈনিক তারা ২-৩কেজি ধান সংগ্রহ করেন। ধান পাকলে ৭দিনের মধ্যে মাঠের ধান কাটা শেষ হয়। এরমধ্যেই তারা ১৫-২০কেজি ধান সংগ্রহ করতে পারেন।
ধান সংগ্রহের পর মাটি ধুয়ে পরিস্কার করে শুকিয়ে নিতে হয়, সেই ধান মেশিনে ভাঙ্গিয়ে চালের গুঁড়ায় বানান ভাপা, মুঠো,দুধ পুলি,দুধ চিতই সহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা। এক সময় ঢেকিতে ধান ভানার প্রচলন থাকলেও এখন তা বিলুপ্ত।
আছিয়া খাতুন জানান,শীত এসেছে মেয়ের জামাইকে পিঠা খাওনের দাওয়াত দিতে হবে, আমাগো আবাদি ক্ষেত নাই । এভাবে যত ধান পাইছি পরিবারের সবাই মিলে পিঠা খেতে পারবো।
জবেদা বেগম বলেন, আমরা ছোটবেলায় পাড়ার সকল মেয়েরা দল বেঁধে এভাবে ধান কুড়াতাম। এখনকার মেয়েরা চড়ায় (মাঠে) আসে না। আগের মতো সেই আনন্দ এখন আর নেই। ৩মেয়ে, জামাই আছে ও নাতি নাতনিদের পিঠা খাওয়ানোর জন্য ধান কুড়াই।
জমিরন বেওয়া বলেন, আগে চামারা ধানের আবাদ আছিলো, সেই ধানের পিঠা অনেক স্বাদ আছিলো। এখন আগের মতো পানি হয়না তাই চামারা ধানের আবাদ নাই।এখন পাইজাম ও গাইন্জা ধানের আবাদ হয়। এগুলোই কুড়াচ্ছি পিঠা বানামু।