
হাসান সিকদার ॥
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে টানা দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছানোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিবেন কিনা তা পরিষ্কার করলেন না। বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে রাখা বক্তব্যে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কোন কথাই তিনি তার কর্মীসমর্থকদের বলেননি। এতে করে সমাবেশে আশা তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে ফিরে যান।
এদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েও হাজারো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন সদর আসনের এমপি ছানোয়ার হোসেন। সে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল পৌঁছালে হাজার হাজার মানুষ তাকে স্বাগত জানান। মির্জাপুরের নাটিয়াপাড়া থেকে কয়েক হাজার মানুষ মোটরসাইকেল নিয়ে তার গাড়ি বহরে যুক্ত হন। পরে শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে সমবেত জনতার উদ্দেশ্য বক্তব্য রাখেন তিনি।
জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর আসনে বিগত ২০১৪ সালে ছানোয়ার হোসেন প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান। পরে জাতীয় পার্টির টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি আব্দুস ছালাম চাকলাদারকে জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলে ছানোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। বিগত ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ছানোয়ার হোসেন দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনিরকে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করলে সেই জোটের প্রার্থী হন পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনির। ওই সময় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছানোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করা না হলে দুজনেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই নির্বাচনে পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনিরকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন ছানোয়ার হোসেন।
তিনি গত ১০ বছরে এলাকায় উন্নয়নের পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ জনসাধারণের সাথে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। সবারই ধারণা ছিল তিনিই তৃতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার খবর শুনেই গত দুইদিন ধরে শত শত মানুষ তার শহরের পাড় দিঘুলিয়ায় অবস্থিত তৃণমূল ভবনে জড়ো হন। বুধবার (২৯ নভেম্বর) তার শহরে আগমনের খবর শুনে হাজার হাজার মানুষ শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে এসে ভিড় করতে থাকেন। কয়েক হাজার মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে মহাসড়ক থেকে তাকে পৌর উদ্যানে নিয়ে আসেন। সেখানে নিজ দলীয় কর্মী ও জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন ছানোয়ার হোসেন। এ সময় তিনি বক্তব্যে বলেন, গত দুটি নির্বাচনে নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে। গত ১০ বছরে যে উন্নয়ন করেছি হাজার হাজার মানুষ আজ তার ভালোবাসা দেখিয়েছে। আজ আমি জনগণের ভালোবাসায় অভিভূত। বিগত দিনেও আপনারা যেমন আমার সাথে ছিলেন এখনও থাকবেন বলে প্রত্যাশা করি। তখন হাত উঠিয়ে হাজার হাজার মানুষ তাকে সমর্থন দেন।
এই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন। এছাড়া বুধবার (২৯ নভেম্বর) পর্যন্ত কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান মিরন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়াও অন্যান্য প্রার্থীরা এ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।