হাবিবুর রহমান, মধুপুর ॥
কৃষিতে জমি তৈরি। বীজ তলা প্রস্তুত। ধানের চারা রোপন। সার বিষ কীটনাশক স্প্রে। কাটা ঝাড়াই মাড়াই এখন সবই হচ্ছে যন্ত্রে। বেড়েছে কৃষি যন্ত্রের ব্যবহার। ফলে বদলে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার কৃষির দৃশ্যপট। আদি কৃষি পরিণত হচ্ছে আধুনিক কৃষিতে। এখন কৃষি জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ধান কাটা মাড়াই ঝাড়াই শুকানো সবই হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। এই সুবাদে কৃষি প্রবেশ করেছে যান্ত্রিক যুগে। ফসল উৎপাদনের ব্যয় যেমন কমেছে। কমছে ফসল ঘরে তোলার সময় সীমাও। সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহ করার যায়। ফলে হ্রাস পাচ্ছে ফসল সংগ্রহের সময়। এতে ফসলের ক্ষতিও কম হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছে ফসল। সংগ্রহত্তোর অপচয় হ্রাস পাওয়ায় বেশি ফসল পাচ্ছে কৃষক। উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকের লাভের পরিমাণও বাড়ছে বলে কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ঘণ্টায় ২.৫ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করা যায়। এতে কৃষকের শ্রমিক, সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়। চারা রোপণে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে রোপণ খরচ ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ পর্যন্ত কমানো সম্ভব বলে জানা যায়। আবার স্বল্প শ্রমিকেই হয়ে যাচ্ছে ধান কাটা ও মাড়াই। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ঘণ্টায় চার বিঘা জমির ধান কাটা যাচ্ছে। বীজ থেকে শুরু করে মাড়াই পযন্ত যান্ত্রিকভাবে অনেকটাই হচ্ছে। পিরোজপুর গ্রামের দোকানদার আরিফুল ইসলাম (২৫) জানান, তিনি একদম ছোট বেলায় গরুর গাড়ি, গরু দিয়ে হাল চাষ করতে দেখেছেন। এখন আর তাদের এলাকায় গরু দিয়ে হাল চাষ দেখা যায় না। গরুর গাড়ি মহিষের গাড়িও নেই। হালচাষ হচ্ছে মেশিনে।
এছাক আলী (৪৮) জানান, জমি প্র¯তুত থেকে রোপণ পর্যন্ত লাগতো দীর্ঘ সময়। আবার শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়েও বিপাকে পড়তে হতো। সময়ের ব্যবধানে গত কয়েক বছরে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় কৃষকদের সেই কষ্ট লাঘব হতে চলেছে। এখন আর শ্রমিকদের অপেক্ষায় দিন গুণতে হয় না কৃষকদের। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের ফলে স্বল্প সময়েই কয়েক বিঘা জমি চাষাবাদ করা যাচ্ছে।
কৃষক জালাল উদ্দীন (৩০) জানান, তাদের পাহাড়িয়া এলাকায় গাছের মুথা ও কলা আনারসের মুথার মধ্যে গরুর লাঙ্গল দিয়ে যেখানে চাষ করা সম্ভব হতো না, সেখানে ট্রাক্টর দিয়ে অল্প সময়ে একফুট গভীর চাষ করে অল্প দিনেই চারা রোপন করা যায়। যার ফলে সময় ও উৎপাদন ব্যয় অনেকটা কমে গেছে। বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক প্রাপ্ত গারোবাজারের কৃষক ছানোয়ার হোসেন জানান, এক সময় গরু চড়ানোর জন্য জমি ৩/৪ বছর পতিত রাখা হতো। ১/২ বছরে এক ফসল হতো। এখন কৃষি বহুমুখীকরণ ও বানিজ্যিকিকরণ হচ্ছে। ফলে কৃষিতে ফসলের বৈচিত্র্য আসছে। উৎপাদন বাড়ছে। উন্নত হয়েছে। তিনি জানান, যান্ত্রিকরণের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত করণের ব্যবস্থা হলে কৃষি আরও এগিয়ে যাবে। কীটনাশক ব্যবহারের জন্য ড্রোন ব্যবহার করতে পারলে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, কৃষি যান্ত্রিকরণের ফলে কৃষিতে বিপ্লব হচ্ছে। অর্থনৈতিক সচলতা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সময় অপচয় রোধসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে ফসল রক্ষা পাচ্ছে।বীজ থেকে শুরু করে ঝাড়াই মাড়াই হচ্ছে যান্ত্রিক ভাবে। তিনি জানান, সরকার যান্ত্রিকীরণের জন্য সমতল এলাকায় ৫০% ও হাওড় উপকূলীয় এলাকার জন্য ৭০% ভর্তুকি দিচ্ছে। ড্রোনের মাধ্যমে কীটনাশক স্প্রের ব্যবস্থাও দ্রুতই হবে বলে আশা করছেন।