টাঙ্গাইলে শহরের চেয়ে গ্রামে শীতের আমেজ বেশী

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল স্পেশাল লিড নিউজ

এম কবির ॥
‘প্রথম ফসল গেছে ঘরে/ হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে/ শুধু শিশিরের জল/ অঘ্রানের নদীটির শ্বাসে/ হিম হয়ে আসে/ বাঁশ পাতা- মরা ঘাস-আকাশের তারা/ বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা/ ধানক্ষেতে মাঠে-জমিছে ধোঁয়াটে/ ধারাল কুয়াশা/ ঘরে গেছে চাষা/ঝিমায়েছে এ পৃথিবী’ কবি জীবনানন্দ দাশ হেমন্তের এমন বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর ‘পেঁচা (মাঠের গল্প)’ কবিতায়। প্রকৃতিতে বছর ঘুরে বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এসেছে হেমন্ত। শরৎকাল শেষে হেমন্তের আগমন। ছয় ঋতুর মধ্যে চতুর্থ ঋতু হলো হেমন্ত যা কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত হয়।
হেমন্তের শেষে শুরু হয় শীতকাল, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। হেমন্তের হিম বাতাস কনকনে শীতের আগমনী বার্তা ঘোষণা করে। এই সময়ে প্রকৃতি এক নতুন সাজে সেজে উঠে। বর্ষার জল শুকিয়ে গিয়ে মাঠঘাট হয়ে উঠে অনন্য। হেমন্ত দুয়ারে কড়া নাড়লেও দেশে মৌসুমি বায়ু এখনও সক্রিয়। আর এর প্রভাবে আবহাওয়া এখনও উষ্ণ। তবে আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এ কারণে নতুন করে আর এর প্রভাবে বৃষ্টির শঙ্কা নেই। বাতাসের গতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চলতি মাসের শেষ দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে, অনুভূত হবে শীত মৌসুম। তবে গ্রামাঞ্চলের চেয়ে টাঙ্গাইল শহরে শীত পড়তে সময় লাগছে। যানবাহন ও জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে শহরের তাপমাত্রা তুলনামূলক সবসময় একটু বেশিই থাকে। তবে এবারও গতবছরের মতো শীত আসছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে আকাশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নেবে। ফলে এর প্রভাবে যে সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছিল, সেটি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এর মধ্যে উপকূলে লঘুচাপের সৃষ্টি হলে সে কারণে বৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমি বায়ু চলে যাওয়ার পর চলতি মাসের শেষ দিকেই উত্তরাঞ্চলের দিকে বাতাসের গতির পরিবর্তন ঘটবে। এরপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে তাপমাত্রা। তবে অন্য এলাকার তাপমাত্রা কমতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।
শীত কি এবার আগে নাকি অন্য সময়ের তুলনায় দেরিতে আসছে। তা গত বছরের মতো শীত আসতে শুরু করবে। তবে বাতাসের গতি পরিবর্তনের উপর সবকিছু নির্ভর করছে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল হতে বিদায় নিতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া টাঙ্গাইলসহ দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
এদিকে উত্তরাঞ্চলের চলতি মাসের শেষ দিকে শীত অনুভূত হলেও অন্য এলাকায় দেরি হবে। আমাদের দেশের গ্রামগুলোর তুলনায় শহরের জনসংখ্যা বেশি। এদিকে যানবাহন চলাচল, শিল্প-কারখানার কারণে তাপমাত্রা সব সময় তুলনামূলক বেশি থাকে। এই অবস্থায় গ্রামে শীতের আবহ দেখা দিলেও শহরে এর প্রভাব পড়তে সময় লাগে। এছাড়া বাতাসের যে পরিবর্তন সেটি শুরু হয় উত্তরাঞ্চল হয়েই। এ কারণে ওইসব এলাকায় আগেই শীতের দেখা মেলে। শীতকালে উত্তর দিক (উচ্চ চাপযুক্ত স্থলভাগ) থেকে দক্ষিণ দিকে (নিম্নচাপযুক্ত জলভাগের দিকে) বাতাস প্রবাহিত হয়। জানা যায়, শীতকালে হিমালয়ের নিকটবর্তী উত্তরাঞ্চলে উচ্চ চাপ থাকে। সুতরাং, এই অঞ্চল থেকে বাতাস দক্ষিণে প্রবাহিত করে যেখানে চাপ কম থাকে। এ কারণেই বাতাসের প্রবাহের দিকটি উত্তর দিক থেকে।
একদিকে শীতের পরশ, বেশ ক’দিন ধরে ভোরে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। বিশেষ করে শীত মানেই আলাদা আমেজ। আরেকটি উৎসবের শুরু। শীত বেশি মনে হচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার গ্রামাঞ্চলগুলোতে। এখন গাছের পাতায় শিশিরে ভরে যাচ্ছে। ভোরে একটু ঠান্ডা লেগেছে। কার্তিকের পর থেকেই নেমে আসবে পুরো শীত। হালকা কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। কিছু এলাকায় নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টি হচ্ছে। কুয়াশার কারণেই শীত নামছে।

৩১৮ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *