মধুপুর গড়ে গ্রামীণ জনপদে মাস কালাই চাষ

কৃষি টাঙ্গাইল মধুপুর লিড নিউজ

হাবিবুর রহমান, মধুপুর ॥
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চলকে আনারসের রাজধানী বলা হয়। এ অঞ্চলের মাটি লালচে। উচঁ এলাকায় কাকড় কণাযুক্ত আর একটু নিচু এলাকায় বেলে দোআঁশ মাটি। পাহাড়ি এলাকায় আনারস, কলা, পেঁপে, আদা, কচু, হলুদসহ বিভিন্ন অর্থকরি কৃষি ফসলসহ প্রায় সব ধরনের ফসল জন্মে থাকে। গড় এলাকার মধ্যে দুই পাশে উচুর মাঝখান দিয়ে নিচু খাল বয়ে গেছে। এ নিচু এলাকাকে বাইদ বলা হয়। টিলা উচু নিচু বাইদ এসব হচ্ছে গড় এলাকা ভূমি রুপ বা ভূমি বৈচিত্র্য। মধুপুর, মুক্তাগাছার কিছু অংশ, ঘাটাইল, ধনবাড়ি, সখীপুর, ভালুকার কিছু অংশ, গাজীপুর ও ঢাকা জেলার কিছু অংশ এবং জামালপুর জেলার দক্ষিণ পূর্ব অংশ নিয়ে মধুপুর গড় এলাকা গঠিত।
গড় এলাকায় যুগ যুগ ধরে মাসকালই চাষ হয়ে থাকে। এক সময় আড়হকালাই ও মাসকালাই চাষ হতো। সে সময়ে পানি সেচের জন্য মেশিন কম ছিল। সেচের অভাবে উচু এলাকায় সেচ বিহীন ফসল হিসেবে মাস কালাই চাষ করতো। নিচু এলাকায় ধান চাষ করতো কৃষকরা। ধীরে ধীরে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় মাসকালাই চাষ কমতে শুরু করেছে। বাড়তে থাকে অর্থকরি ফসলের চাষাবাদ। মধুপুর-ধনবাড়ি কৃষি অঞ্চলের কৃষকরা এক সময় মাসকালাইকে কাতি ঠাকুরি বলতো। এ কালাই বা ডাল কার্তিক মাসে বুনা হয় বলে কাতিঠাকুরি বলে অভিহিত করতো। এ অঞ্চলে মাসের ডাল অতিথি আপ্যায়নে ব্যাপক সমাদৃত ছিল। গ্রামের মানুষেরা শীতকালে মাসের ডাল বা লাউয়ের পাতা ভর্তা সুস্বাদু খাবার হিসেবে খেতো। বাড়ি বাড়ি শীতকালে মাসের ডালের সাথে কচি লাউ কেটে দিয়ে ডাল রান্না করতো। বড় কোন অনুষ্ঠান হলে আয়োজন হতো এ ডালের। ধনবাড়ি এলাকায় মাসের ডাল দিয়ে মেন্দা রান্না হতো। এ ডাল চাষ কমে যাওয়ার কারণে দামও বেড়ে গেছে। তবে মধুপুর, ধনবাড়ি ও ভুঞাপুর উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকা ও ধনবাড়ি-ভুঞাপুর উপজেলার নিচু বেলে দোআঁশ মাটিতে ও চরাঞ্চলে মোটামোটিভাবে মাসকালাই চাষ হয়ে থাকে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মধুপুরে এ বছর ৬০ হেক্টর জমিতে মাসকালাই চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৯০ মেট্রিকটন। ধনবাড়িতে বারি-৩ জাতের মাস কালাই চাষ হয়েছে ২৫ হেক্টর। ভুঞাপরে ১২২৪ হেক্টর মাসকালাই চাষ হয়েছে। কৃষক আব্দুল মজিদ এবার মাসকালাই বাড়ি থেকেই ১৫০ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি করেছেন। বাজারে দাম আরো বেশি বলে জানালেন তোতা মিয়া নামের আরেক কৃষক।
মাসকলাই এর আবাদ কমার কারণ উল্লেখ করে ধনবাড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, খরিফ-১ মৌসুমে বেশির ভাগ জমি আমন আবাদের আওতায় থাকায় এবং উচু জমিগুলোতে সবজি চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় মাসকলাই এর আবাদ এ এলাকায় কম। ধনবাড়িতে আবাদ হয়েছে ২৫ হেক্টর বারি মাসকালাই-৩ জাতের। প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে ২৫০ জনকে। ফলন হচ্ছে বিঘা প্রতি ২.৫ মণ। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হেক্টর। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা প্রকল্পের আওতায় ৫ কৃষককে মাসকালাই চাষের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, মধুপুরে এ বছর ৬০ হেক্টর জমিতে মাসকালাই চাষ হয়েছে। তার উপজেলায় ২শ’ জনকে এ ফসলের প্রনোদনা দিয়েছে। তারমতে, প্রনোদনার আওতায় ২শ’ বিঘা চাষ হয়েছে।

 

 

 

 

২৯৫ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *