
হাসান সিকদার ॥
আজ সোমবার ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদারমুক্ত দিবস। টাঙ্গাইলের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার সূর্যসেনারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে মুক্ত করে উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। দিনটিকে স্মরণ করে টাঙ্গাইলবাসী তাই এখনো আনন্দে উদ্বেলিত হয়; বাঁধভাঙা আনন্দের স্রোত বয়ে যায় টাঙ্গাইলে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে; যতদিন বাঙালি থাকবে- ততদিনই ১১ ডিসেম্বরের আনন্দ আসবে নতুনের স্বাদ নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইল নানাদিক থেকে অসামান্য ইতিহাস সৃষ্টি করে। এখানকার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসীকতাপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী দেশের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বজুড়ে। টাঙ্গাইলের কালিহাতীর কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত ও পরিচালিত ‘কাদেরীয়া বাহিনী’র বীরত্বের কথা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরুতেই এখানে ‘টাঙ্গাইল জেলা স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ’ গঠন করা হয়। চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। ২৬ মার্চ থেকে গ্রামে-গ্রামে যুবকরা সংগঠিত হয়। ৩ এপ্রিল মির্জাপুরের গোড়ান-সাটিয়াচড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবরোধ ভেঙে হানাদারবাহিনী টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে যান। অল্পদিনের মধ্যেই সেদিনের তরুণ-যুবক ছাত্রলীগ নেতা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বিশাল ‘কদেরিয়া বাহিনী।’ শুরু হয় বিভিন্নস্থানে হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ। উল্লেখ্য কাদেরীয়া বাহিনীতে প্রায় ১৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও অর্ধলাখেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক ১১নং বিশেষ সেক্টরে নিয়োজিত ছিলেন। তারা ৩ শতাধিক সম্মুখযুদ্ধ এবং কয়েক হাজার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেন। এছাড়া নাগরপুরের খন্দকার আবদুল বাতেনের নেতৃত্বে গঠিত ‘বাতেন বাহিনী’ও অনেক জায়গায় হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
টাঙ্গাইলে মুক্তিযুদ্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করে কাদেরিয়া বাহিনী। চারদিক থেকে তাদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকবাহিনী। ১০ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল শহরের অদূরে কালিহাতীর পৌলি ও এর আশেপাশের এলাকায় মিত্রবাহিনীর ছত্রীসেনা অবতরণ করায় হানাদারদের মনোবল একেবারেই ভেঙে পড়ে। ১১ ডিসেম্বর ভোর থেকে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করতে থাকে। টাঙ্গাইল শহর শত্রুমুক্ত হয়। মানুষ নেমে আসে রাস্তায়। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে শহর…। কাদেরীয়া বাহিনীর নেতৃত্বেই টাঙ্গাইল স্বাধীন হয়। টাঙ্গাইলে হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে পৌরসভার উদ্যোগে সকালে মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল শ্রেনীপেশার সমন্বয়ে পৌর উদ্যান থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালী, বিকেলে আলোচনা সভা ও সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপিসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। নির্বাচনকালীন সময় বিবেচনা করে একদিনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ১১-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।