
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ‘বিএনপি সমর্থিতদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই’ বলা সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আব্দুর রউফ মিয়া ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আব্দুর রউফ মিয়াকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
গত রবিবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া ফতেপুর উত্তরপাড়া গ্রামে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে ‘বিএনপির ভাইয়েরা নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নাই’ বলে বক্তব্য দেন। তার এই বক্তব্য মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাড়া হলে তা ভাইরাল হয়।
এমন খবরে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান ফতেপুর বাজারে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়াকে জনসমক্ষে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ইউপি চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ সময় চেয়ারম্যান তার ওই বক্তব্যের জন্য দোষ স্বীকার করে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮-এর ১১ ধারায় ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য বিবৃতি প্রদান উচ্ছৃঙ্খল আচরণের অপরাধে তাকে এই জরিমানা করা হয়েছে বলে বিচারক মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন।
গত (৬ ডিসেম্বর) ফতেপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ুন তালুকদার এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে ফতেপুর বাজারে যান। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া তার ছেলে, ভাই, ভাতিজাদেরসহ ২০/২৫ জনকে লাঠিসোঠা হাতে নিয়ে হুমায়ুন তালুকদারের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। পরে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হুমায়ুন তালুকদারকে হামলার কবল থেকে রক্ষা করে মির্জাপুরে পাঠান। এ বিষয়ে হুমায়ুন তালুকদার কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া ফতেপুর ইউনিয়নে গান বন্ধের ঘোষণা দিয়ে সমালোচিত হন। গত (৮ নভেম্বর) রাতে ফতেপুর গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকার রহিম পীর নামে এক ব্যক্তির ওরশ মাহফিলে বক্তব্য দিয়ে শরিয়ত বয়াতির গান পরিবেশন বন্ধ করেন তিনি। যার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন রহিম পীর। আব্দুর রউফ ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। তিনি বিগত ২০১৭ সালে (১৬ এপ্রিল) ইউপি নির্বাচনে ফতেপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন চান। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একই বছর (২০ আগস্ট) আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। বিগত ২০২১ সালের (১ এপ্রিল) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর বিগত ২০২২ সালে (১৫ জুন) ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
এ বিষয়ে ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের বক্তব্য জানার জন্য বার বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম হুমায়ুন তালুকদারের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আর সেই মুহুর্তে রউফ চেয়ারম্যান ভোটারদের কেন্দ্রে না আসার জন্য হুমকি দিচ্ছে। তার বক্তব্যের দায়ভার শুধু তার। তার এই বক্তৃতার দায়ভার আওয়ামী লীগ নিবে না। তিনি পূর্বে ওই ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য কৌশল নিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।