
স্টাফ রিপোর্টার ॥
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শুরু হতে না হতেই সহিংসতায় শঙ্কিত হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের নির্বাচনী পরিবেশ। এরই মধ্যে জেলার আটটি আসনের মধ্যে তিনটি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী অফিস ভাংচুরসহ কর্মী সমর্থকদের মারধর ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মন্টুর লাঠি নিয়ে অফিসে পাহাড়া দেয়ার ঘোষণা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীসহ কর্মী-সমর্থকরা। সহিংতার এ সকল ঘটনায় ভীত হয়ে উঠছেন সাধারণ ভোটাররা।
এদিকে সহিংসতা ঘটনার প্রতিবাদে স্ব স্ব থানায় অভিযোগ দেয়াসহ জেলা রিটার্নিং কমকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী প্রার্থীরা। মঙ্গল ও বুধবার (১৯ ও ২০ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইল-২, ৩, ৫, ৬ ও ৭ আসনে নির্বাচনী সহিংসতার এ ঘটনাগুলো ঘটেছে।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ নির্বাচনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানোয়ার হোসেনের ৪ নেতাকর্মী আহত করাসহ বাঘিল ইউনিয়নের চাকতা ও মগড়া ইউনিয়নের আয়নাপুর হাটখোলার নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতরা হলেন- বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মুকুল হোসেন (৫০), মাহিনুর ইসলাম (১৮), মোতালেব হোসেন (৩৫) ও হাবেল উদ্দিন (৭০)) এ হামলায় গুরুতর আহত স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই সমর্থক মুকুল হোসেনও মোতালেব হোসেন টাঙ্গাইল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান রানার ৫ নেতাকর্মীকে আহত করাসহ উপজেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নের দুটি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর হয়েছে। এছাড়াও টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের ভূঞাপুর কাচার বাজারস্থ ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কার্যালয়ে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদারের নির্বাচনী সভায় হামলার একটি ঘটনা ঘটে।
টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু বলেন, ভূঞাপুর কাচার বাজারস্থ ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কার্যালয়ে নির্বাচনী সভা চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর ক্যাডাররা হামলা করে। এসময় অফিসে ভাঙচুর ও হুমকি দেয়া হয়। এছাড়া আমাদের টার্গেট করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। পরে পুলিশকে অবহিত করা হলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই ঘটনায় হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করে থানাসহ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা বলেন, উপজেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নে নৌকার কর্মীরা আমার দুটি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। বাঁধা দেয়ায় তার ৫ নেতাকর্মীকে মারপিট করেছে। এ ঘটনায় ঘাটাইল থানা ও রির্টানিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার আশরাফকে নাগরপুর উপজেলার ভাররা হাইস্কুলে প্রতিপক্ষরা হামলা চালিয়ে মারপিট করার অভিযোগ উঠেছে। টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রয়োজনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। ইতোমধ্যে আমি দুইবার দলীয় প্রতীকে সদর আসনে নির্বাচন করেছি। ওই নির্বাচনগুলোতে কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি। আমার আয়নাপুর হাটখোলা অফিসের ব্যানার পোস্টার ছিড়ে ফেলাসহ অফিস বন্ধ না করা হলেও তাদের হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। এর একঘন্টা পর রাত ৯টার দিকে বাঘিল ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চাকতা গ্রামের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করাসহ আমার চারজন কর্মীকে আহত করা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে ভোটার উপস্থিতি কমানোর জন্য এটি একটি ষড়যন্ত্র। এ ঘটনায় থানা ও রির্টানিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ভাংচুর কর্মীদের উপর হামলার তথ্য পেয়ে হাসপাতাল পরিদর্শনে যাই। আহতদের দেখে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম জানান, জেলার ৪টি আসনে সহিংসতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়া টাঙ্গাইল-২ আসনের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এছাড়া টাঙ্গাইল-৩ ও ৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রানা ও মন্টুকে মৌখিকভাবে শতর্ক করা হয়েছে। এছাড়াও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।