
হাসান সিকদার ॥
সকল আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন গড়িয়েছে মাঠের লড়াইয়ে। টাঙ্গাইল জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক বুঝে নিয়ে প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন আনুষ্ঠানিক প্রচারে। আগামী (৭ জানুয়ারি) ভোটের আগে (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে এই প্রচার পর্ব। এ সময়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাওয়া শুরু করেছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনি সভা-সমাবেশ-মিছিলে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো টাঙ্গাইল জেলার ৮টি সংসদীয় আসন। টাঙ্গাইলের ৮টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান ৪ জন এমপি মনোনয়ন পেয়েছেন। আর বর্তমান ৪ জন এমপির কপাল পুড়েছে।
এদিকে জেলার ৫টি আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই পাঁচটি আসন হলো- টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর), টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল), টাঙ্গাইল-৫ (সদর), টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর), টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর)। এই আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থীদের সাথে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে কঠিন ভোট যুদ্ধ হবে। এসব আসনে আওয়ামী লীগের নিজ দলের কর্মী সমর্থকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। প্রচার-প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই বিভিন্ন এলাকায় নৌকার কর্মী সমর্থক ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে মারামারি, সংর্ঘষ ও নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে। তবে এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
অপরদিকে টাঙ্গাইল জেলার চারটি আসনের বর্তমান ৪ জন এমপি এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। এরা হলেন- টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতাউর রহমান খান, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী, টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের।
এর মধ্যে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছানোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নৌকার শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন বর্তমান এমপি ছানোয়ার হোসেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান মিরন প্রতিক পাওয়ার আঘা ঘন্টা পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। এছাড়া সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই ও সাবেক ছাত্রনেতা মুরাদ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের বতর্মান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন পদত্যাগকারী গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের বর্তমান এমপি আতাউর রহমান খান। তিনি এবার মনোনয়ন পাননি। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। কিন্তু এ আসনে বর্তমান এমপি আতাউর রহমান খানের ছেলে, দুইবারের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন লড়ছেন।
টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনের বতর্মান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আহসানুল ইসলাম টিটু ফের মনোনয়ন পেয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তারেক শামস খান হিমু। টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের বতর্মান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু।
এছাড়া টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনের বর্তমান এমপি ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক তিনি এবার দিয়ে পাঁচবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। এখানে নৌকার প্রতিক পেয়েছেন কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু। এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। কিন্তু তার শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন এ আসনের চারবারের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের এবার মনোনয়ন পাননি। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি ও সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাহজাহান জয়। এ আসনে তার শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন এ আসনের সাবেক এমপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।
আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট খোরশেদ আলম বলেন, যারা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনী লড়াইয়ে নৌকার প্রার্থীদের জন্য কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে। কিন্তু সাধারণ ভোটার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকা মার্কাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে বলে তিনি আশাবাদি।