
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
জাতীয় সংসদের-১৩৬ টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে জমে উঠেছে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের নবীন প্রার্থী বনাম স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতিকের প্রবীণ প্রার্থীর মধ্যে শক্তিশালী ভোটের লড়াই। বর্তমান সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বিপরীতে লড়ছেন মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, টানা ৪০ বছরের জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু। তিনি গত (২৭ নভেম্বর) উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ আসনের টানা চারবারের সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন বিগত ২০২১ সালের (১৬ নভেম্বর) মারা গেলে ২০২২ সালের (১৬ জানুয়ারি) খান আহমেদ শুভ উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের টানা পাঁচবার এবং উপজেলা পরিষদের টানা তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান (পদত্যাগ করে) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (ট্রাক) প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাকে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, প্রয়াত সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেনের ছেলে সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাফিউর রহমান ইফসুফজাই সানি, মেজর (অব) খন্দকার আব্দুল হাফিজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিটন সমর্থন দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ নেতা সমর্থন দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনী মাঠ সরব করে তুলেছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর পক্ষে পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শামীমা আক্তার শিফা, ভাইস চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌরসভাসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালিয়ে (ট্রাক) প্রতিকের ভোট প্রার্থনা করছেন। বিগত ২০১৯ সালে মীর এনায়েত হোসেন মন্টু নৌকা প্রতীকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় দাবি করছেন তিনি আওয়ামী লীগেরই লোক। উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বক্তৃতায় বলছেন নৌকার মাঝি সঠিক না হওয়ায় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাকে উঠেছেন। অবস্থাদৃষ্টে অনেকেই বলছেন এ আসনটিতে নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে আওয়ামী লীগের ভোটের লড়াই হবে জমজমাট।
ট্রাক প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টু তার প্রচারণায় বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আমার প্রার্থী হওয়া। গণভবনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেছেন যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারে। নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মহলে অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তিনি। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা ও আমার নেতা ওবায়দুল কাদের বলেই দিয়েছেন- আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের যেকোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারবে। কোন নেতাকে বহিস্কার করা হবে না। জনপ্রিয়তা যাচাই করে বিজয়ী হতে হবে। ফলে শত শত নেতাকর্মী আমার পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। কারণ তারা জানেন, আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করলেও শেখ হাসিনার হাতই শক্তিশালী হবে।
আওয়ামী লীগের (নৌকা) প্রতিকের প্রার্থী খান আহমেদ শুভ প্রচারণায় বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা, শেখ হাসিনার প্রতীক নৌকা। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। মির্জাপুর উপজেলায় ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীর মধ্যে কিছু নেতাকর্মী নৌকার বাইরে থাকতেই পারে। আমি শেখ হাসিনার প্রতিনিধি, নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছি। উপজেলাবাসী আমাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। অন্য প্রতীক নিয়ে যিনি এসেছেন, তিনিও বলেন সে আওয়ামী লীগের। তিনি আওয়ামী লীগের নয়, স্বতন্ত্র।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসারের দপ্তর সূত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪৩২ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ১ লক্ষ ৮০ হাজার ২০৭ ও মহিলা ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ২১৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৬ জন।