
সাদ্দাম ইমন ॥
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৬ দিন বাকি। ইতোমধ্যেই প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনে বিজয়ের টার্গেট নিয়ে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে নানা কৌশল কাজে লাগাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দল, সংগঠন ও এলাকার প্রভাবশালীদের সঙ্গে সমঝোতা করে ভোট ব্যাংক বাড়ানোর জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। এভাবেই সবাই ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে ভোট প্রার্থনা শুরু হয়েছে গত (১৮ ডিসেম্বর) প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে। তবে তার আগেই ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে টাঙ্গাইল জেলার ৮টি আসনে প্রার্থীরা যেমন বিভিন্ন কৌশলে ভোট প্রার্থনা করেছেন তেমনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে অনেকেই ভোটারদের সমর্থন পেতে জোর তৎপরতা চালিয়েছেন। বর্তমানে নির্বাচনে বিজয়ের টার্গেট নিয়েই এখন প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগের পাশাপাশি প্রচারণা চালাচ্ছেন উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে। নিজ নিজ এলাকায় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা বিভিন্নভাবে পাড়া-মহল্লায় গিয়ে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে ভোটের পাল্লা ভারী করার চেষ্টা করছে। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে নানা কৌশলে সরব হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলের ৮টি আসনে ভোটে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। ভোটে জেতার লক্ষ্য নিয়েই চলছে নানা মেরুকরণ। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ৫টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শক্ত ভোট যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। টাঙ্গাইল-২, ৩, ৪, ৫, ৭ এই পাঁচটি আসনের নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ও বিপক্ষে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মীসমর্থকরা। এছাড়া টাঙ্গাইল-৮ আসনেও নৌকার প্রার্থীকে হেভিওয়েট প্রার্থীর মোকাবেলা করতে হচ্ছে। জধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহর ও দেশের বাহির থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ টাঙ্গাইল জেলায় ছুটে এসেছেন। আবার শহরের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে তাদের স্বজনরা ছুটে আসছেন গ্রাম থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অনেক প্রবাসী বাঙালি স্বজনদের পক্ষে কাজ করতে ফিরে আসছেন দেশে। এ কারণে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই টাঙ্গাইল জেলায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। শহর ও গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারে চায়ের দোকান ও রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে সর্বত্র আড্ডা জমে উঠেছে। এসব আড্ডায় আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে কে বিজয়ী বা পরাজিত হতে পারেন। এছাড়া কে বেশি যোগ্য এবং বিজয়ী হলে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা বেশি উপকৃত হবে।
এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ। নির্বাচনকালে পরিবেশ অনুকূলে থাকবে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন মহল। সকল প্রার্থীর জন্য লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা ও আচরণবিধির যথাযথ প্রয়োগ। ইতোমধ্যেই বেশ ক’জন প্রভাবশালী প্রার্থীকে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে কারণ দর্শাও নোটিস দিয়ে তা প্রমাণ করেছে টাঙ্গাইল জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কায়ছারুল ইসলাম। এর মধ্যে নির্বাচনী আচরণ বিধিভঙ্গের কারণে কয়েক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে আনসার, কোস্ট গার্ড, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকছে। এর বাইরে সেনাবাহিনীও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। আগামী (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই গত (২৮ ডিসেম্বর) নেমেছে বিজিবি। আগামী (৩ জানুয়ারি) থেকে (১০ জানুয়ারি) পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে।
এছাড়া ইসির পক্ষ থেকে এবার ভোটকেন্দ্রে সকল প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করা, ভোট গ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আচরণবিধি মানাতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। তারা গত (২৮ নভেম্বর) থেকে কাজ শুরু করেছেন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট আসনে প্রার্থীদের অপরাধ তদন্ত করে আমলে নেওয়ার জন্য এসব কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত এ কমিটি দায়িত্ব পালন করবে। এই কমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন যুগ্ম জেলা জজ ও সিনিয়র সহকারী জজগণ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।