ঘাটাইল আসনে ডা. কামরুল ও রানার জমজমাট লড়াই

ঘাটাইল টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল স্পেশাল রাজনীতি লিড নিউজ

জাহিদ হাসান ॥
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। তিনি দেশের বিখ্যাত নাট্যকার মামুন অর রশীদের ছোট ভাই। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা। উপজেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে সভা-সমাবেশসহ নির্বাচন করছেন দলীয় নৌকা প্রতিক প্রার্থী ডাক্তার কামরুলের পক্ষে। অপরদিকে রানা তাদের ‘খান পরিবারের’ অনুসারীদের নিয়ে প্রচারনা চালাচ্ছেন। ফলে এ আসনের নির্বাচন আওয়ামী লীগ বনাম ‘খান লীগের’ লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। ফলে জমজমাট হয়ে উঠেছে নির্বাচনী লড়াই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় সরব ঘাটাইলের এ আসনটি। ডাঃ কামরুল হাসান খানের জন্য এ আসনটি প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ আসনটি দখলে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে খান পরিবার।
এবার এই আসনে মোট সাতজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটের লড়াই হবে দুই প্রার্থীর মধ্যে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ভোটের লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিকে ঘাটাইল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য হয়েও আতাউর রহমান খানের সাথে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মির সম্পর্ক ছিল না। তিনি তার ছেলে আমানুর রহমান খান রানার ব্যক্তিগত কর্মি-সমর্থক নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন। নির্বাচন প্রচারনার শুরু থেকেই দুই পক্ষ থেকে নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর, দলীয় কর্মীদের হুমকিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। তাই নির্বাচনী উত্তাপের পাশাপাশি উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়েছে এ আসনে।
ঘাটাইল উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৩ আসনটিতে ১৯৭০ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন শামসুর রহমান খান শাহজাহান। তিনি ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শামসুর রহমান খান শাহজাহান স্বতন্ত্র প্রার্থী আমানুর রহমান খান রানার চাচা। এছাড়া বিগত ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা লুৎফর রহমান খান আজাদ। শামসুর রহমান খান শাহজাহান এবং লুৎফর রহমান খান আজাদ সম্পর্কে চাচাতো ভাই। বিগত ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেন চিকিৎসক মতিউর রহমানকে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১২ সালে মতিউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম লেবু। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আমানুর রহমান খান রানা। বিগত ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে আমানুর রহমান খান রানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছরই পুলিশি তদন্তে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় আমানুর রহমান খান রানার সম্পৃক্ততার বিষয়টি বের হয়ে আসে। পরে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। কয়েক বছর আত্মগোপন ও হাজত বাস করতে হয় তাকে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। প্রায় তিন বছর হাজতবাস খেটে বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন তিনি। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমানুর রহমান খান রানার পিতা সাবেক ব্যাংকার আতাউর রহমান খানকে এক প্রকার ডেকে নিয়ে এই আসনে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। রাজনীতির বাইরে থাকা সাবেক ব্যাংকার আতাউর রহমান খান এমপি নির্বাচিত হন। তারপর থেকেই বিভিন্ন সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে খান পরিবারের কর্মিসমর্থকদের হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে প্রতিনিয়ত। হামলার শিকার হয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে। এ থেকেই আমানুর রহমান খান রানার কিছু অনুসারী নিয়ে ঘাটাইলে সক্রিয় থাকেন। যা স্থানীয়ভাবে ‘খান লীগ’ নামে পরিচিতি পায়।
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, দলীয় প্রার্থী ডাঃ কামরুল হাসান খানের পক্ষে উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের সকল নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করছে। বিপুল ভোটে আমরা তাকে বিজয়ী করব। সন্ত্রাসী রানার বিরুদ্ধে ভোটারদের হুমকি দেওয়া ও নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগ করেন। রানা ঘাটাইলের বাহির থেকে তার অনুসারী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে নির্বাচনী কাজ করছেন। তারা আওয়ামী লীগের কেউ না।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. কামরুল হাসান খান জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী রানার লোকজন আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এরমধ্য দিয়ে তারা দলীয় কর্মীদের আতঙ্কের মধ্যে রাখছে। জননেত্রী ও সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ভোটারকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহবান জানাচ্ছেন। ঠিক সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী রানা তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভোটারদের আতঙ্ক তৈরি করছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আমানুর রহমান খান রানার অনুসারী আনেহোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার শাহজাহান বলেন, জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে রানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। নৌকার লোকজন আমাদের কর্র্মী-সমর্থকদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমাদের কয়েকটি নির্বাচনী অফিসও ভাংচুর করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আমানুর রহমান খান রানা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, উপজেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নের দেউজানা বাজার ও ফকিরচালা বাজারে তার নির্বাচনী কার্যালয় নৌকার সমর্থকরা ভাংচুর করেছে। তাদের হামলায় তার কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন।
ঘাটাইল-৩ আসনে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন- আব্দুল হালিম (জাতীয় পার্টি), ক্যাপ্টেন (অব:) জাকির হোসেন (বিএনএম), সাখাওয়াত খান সৈকত (বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল), হাসান আল মামুন (এনপিপি), আব্দুল আজিজ খান (জাকের পার্টি)।

 

 

 

 

 

১৭০ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *