
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে শুভ-মন্টুর নির্বাচনী লড়াই জমে উঠেছে। নির্বাচনী মাঠে খনেখনে নৌকা ও ট্রাকের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। নৌকার প্রার্থী বয়সে তরুণ খান আহমেদ শুভ’র সঙ্গে প্রবীণ নেতা স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতিকের প্রার্থী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু প্রচার-প্রচারনা চলছে সমান তালে। কখনও নৌকার পাল্লা ভারী হচ্ছে। আবার কখনও ট্রাকের পাল্লা ভারী হচ্ছে বলে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে এবার মোট আটজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে খান আহমেদ শুভ’র (নৌকা) প্রতীকের সঙ্গে স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতিকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর সাথে। মির্জাপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভায় মোট ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪৩২ জন ভোটার রয়েছেন। বিগত ২০০১ সাল থেকে টানা চতুর্থ বার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা একাব্বর হোসেন এমপি নির্বাচিত হন। তাঁর মৃত্যুতে বিগত ২০২২ সালের (১৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ এমপি নির্বাচিত হন।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপনির্বাচনে খান আহমেদ শুভ এমপি নির্বাচিত হয়ে মাত্র দেড় বছর সময়ে মির্জাপুরের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, মসজিদ-মন্দির, স্কুল মাদরাসার ব্যাপক উন্নয়ন করেন। এছাড়া এ উপজেলার ৫শ’ অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পৌনে তিন কোটি টাকা চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা করে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন। এমপি শুভ নির্বাচিত হওয়ার পর দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই এলাকায় গণসংযোগ করায় তাঁর জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে। এতে এই আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যার্শী থাকলেও শুভকে দ্বিতীয় বারের মতো মনোনয়ন দেয়া হয়। এদিকে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ২০/২৫টি পথসভা, উঠান বৈঠক ও সভা-সমাবেশ করে উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি প্রতিটি সভায় আবেগঘন বক্তৃতা দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
সোমবার (১ জানুয়ারি) সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গোড়াই, ভাতগ্রাম ও মির্জাপুর পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে তিনি ২০/২৫ উঠান বৈঠক, পথসভা ও সভা সমাবেশে হাজির হয়ে ভোট প্রার্থনা করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তৌফিকুর রহমান তালুকদার রাজীব ও সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল বলেন, এমপি শুভ প্রতিদিন কমপক্ষে ২০/২৫টি সভা-সমাবেশে উপস্থিত থেকে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। প্রতিটি সভায় তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁর আবেগঘন বক্তৃতা করে থাকেন। এতে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নৌকার পাল্লা ততাই ভারী হচ্ছে।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টানা তিন বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ও দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ করছেন। এসব বিষয়গুলো তিনি তার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় তুলে ধরছেন। এদিকে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনা শুরু হলে মীর এনায়েত হোসেন মন্টু নিজে তেমনভাবে সভা সমাবেশে হাজির হয়ে প্রচার প্রচারনায় অংশ নিতে পারছেন না। তবে তাঁর পক্ষে ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, ছেলে যুবলীগ নেতা মীর মঈন হোসেন রাজীব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহিরসহ একাধিক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সভায় উপস্থিত হয়ে (ট্রাক) প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন।
বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের বাসিন্দা বিষু মোল্লা, পাটুলি গ্রামের নয়ন মিয়া, দুরপাশা গ্রামের দুলালী বিশ্বাসসহ অনেক ভোটার জানান, মির্জাপুরে এবার নবীন-প্রবীনের ভোটের লড়াই বেশ জমে উঠেছে। একদিকে বর্তমান এমপি শুভর উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড অপরদিকে বয়সী ও প্রবীন নেতা মন্টুর রয়েছে দীর্ঘ ৪০ বছরের জনপ্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা। তবে নির্বাচনী মাঠে তার বয়স একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে তিনি নিজে তেমনভাবে প্রচারে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টু প্রতিদিন ৮/১০টি সভায় হাজির হয়ে থাকেন। তবে তারপক্ষে তিনিসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ একাধিক সভা-সমাবেশে ভোট প্রার্থনা করে থাকেন বলে জানান।