এম কবির ॥
আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ৫৩ বছরের নির্বাচনী ইতিহাসের সাক্ষী অংশ নেওয়া জীবিত নেতাদের মধ্যে শেষ চারজন আছেন এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। বিরল এই তালিকায় থাকা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। দীর্ঘ ৫৩ বছরের নির্বাচনী ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তারা। এমন দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী বর্ষীয়ান নেতাদের অংশগ্রহণ নির্বাচনে অন্য রকম এক বৈশিষ্ট্য যোগ করেছে। হেভিওয়েট বর্ষিয়ান নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে ৬ষ্ঠ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন। অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে বাঙালি নিশ্চিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাও করেন মূলত সত্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। প্রথম ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। এরপর তিনি ১৯৭৩ এ দ্বিতীয়বার, ১৯৯৬ সালে তৃতীয়বার, ২০০৮ সালে চতুর্থবার, ২০১৪ সালে পঞ্চমবার এবং দীর্ঘ ১০ বছর পর সর্বশেষ ২০২৪ সালের (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬ষ্ঠ বারের মতো স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতিক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহু চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে এখনও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আছেন রাজনীতির ময়দানে। স্বাধীন দেশে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন মন্ত্রী হিসেবেও। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতিকের প্রার্থী হয়ে আবারও জয়লাভ করেছেন হেভিওয়েট প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন আওয়ামী রাজনীতির অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ব। সত্তরের নির্বাচনে টাঙ্গাইল থেকে (নৌকা) প্রতীকে অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচনে জয়ী লতিফ সিদ্দিকী ২০১৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তবে প্রবল ব্যক্তিত্ব, এক রোখা স্বভাব এবং স্পষ্টবাদী হওয়ায় মাঝেমধ্যেই আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রে ওঠে আসতে দেখা যায় তাকে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে একটি মন্তব্যের জেরে বড় ধাক্কা খান লতিফ সিদ্দিকী। মন্ত্রিত্ব, সংসদ সদস্য পদ হারানোর পাশাপাশি নিজ দল আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হতে হয় তাকে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় রাজনীতিতে এখনো ভীষণ প্রভাবশালী হিসেবেই পরিগনিত হচ্ছেন তিনি। বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী আছে তার। তাদের ওপর ভরসা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সত্তরের নেতা মূল ধারায় ফিরতে চান বলে জানা গেছে।
জেলা রিটার্নিং অফিস সূত্রে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের চুড়ান্ত বেসরকারীভাবে ঘোষিত ফলাফলে জানা যায়, এ আসনে স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী জয়লাভ করেছেন। তিনি ৭০ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা) প্রতিকের প্রার্থী মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৫ ভোট। স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রতিকের প্রার্থী সারওয়াত সিরাজ শুক্লা পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৮৭ ভোট। জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) প্রতিকের প্রার্থী লিয়াকত আলী পেয়েছেন ৫০৩ ভোট। জাসদ (মশাল) প্রতিকের প্রার্থী এসএম আবু মোস্তফা পেয়েছেন ২০৩ ভোট। জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) প্রতিকের প্রার্থী মোন্তাজ আলী পেয়েছেন ২৬১ ভোট। তৃনমূল বিএনপি (সোনালী আশঁ) প্রতিকের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পেয়েছেন ১৩৬ ভোট। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) প্রতিকের প্রার্থী শুকুর মাহমুদ পেয়েছেন ১০৩ ভোট। জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) প্রতিকের প্রার্থী সাদেক সিদ্দিকী পেয়েছেন ১৪৭ ভোট।
এ আসনে ১১৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৩টি কেন্দ্রেরই ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। এসব কেন্দ্রে সর্বমোট ভোটার ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৫৬ ভোট। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭৮ ভোট। বৈধ ভোট পড়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৫৫ ভোট। বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৪২৩ ভোট। প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ৩৯%। এ আসনের স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী তার নিকটতম প্রার্থীর থেকে ১৬ হাজার ৮৬৫ ভোট বেশী পেয়ে জয়লাভ করেছেন।