স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে খান আহমেদ শুভ এমপি’র ইমেজ ও জনপ্রিয়তার কাছে ধরাশায়ী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ দলের অর্ধশতাধিক নেতা। তাঁরা নৌকার প্রার্থী শুভকে হঠাতে একজোট হয়ে স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতিকের প্রার্থী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগকারী আওয়ামী লীগ নেতা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর পক্ষে নির্বাচনে নামেন। তবে এসব নেতাদের টেক্কা মেরে ব্যক্তি ইমেজ ও জনপ্রিয়তায় ৩২ হাজার ৩৯৯ ভোটের ব্যবধানে খান আহমেদ শুভ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
রবিবার (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী খান আহমেদ শুভ পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৩৯৩ ভোট, নিকটতম স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতিকের প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টু পেয়েছেন ৫৭ হাজার ২৩১ ভোট। স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করছেন, শুভর ব্যক্তি ইমেজ ও জনপ্রিয়তার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে খান আহমেদ শুভ ছাড়াও আওয়ামী লীগের ৮ নেতা মনোনয়ন প্রত্যার্শী ছিলেন। কিন্তু দল মনোনয়ন দেয় খান আহমেদ শুভকে। মনোনয়ন বঞ্চিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাফিউর রহমান ইউসুফজাই সানি ও মেজর (অবঃ) খন্দকার আব্দুল হাফিজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিটন ক্ষুব্দ হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগকারী আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতিকের প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুকে সমর্থন দেন। মনোনয়ন বঞ্চিত ৫ নেতা ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ৫৩ নেতা, মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ আরও অনেক নেতা ও কতিপয় জনপ্রতিনিধিরা নৌকা ঠেকাতে মাঠে নামেন। তাঁরা নৌকা ঠেকাতে উপজেলা সদরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে কয়েক হাজার লোক জড়ো করে স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতিকের প্রার্থীর পক্ষে সমাবেশ করেন।
মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মোবারক হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই সভায় মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা ছাড়াও পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শামীমা আক্তার শিফা, ভাইস চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মীর দৌলত হোসেন বিদ্যুৎ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল মামুন, দপ্তর সম্পাদক জহিরুল হক প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এমপি খান আহমেদ শুভ বহিরাগত, তার বাড়ি টাঙ্গাইলে উল্লেখ করে নেতারা শ্লোগান তুলেন ‘হটাও টাঙ্গাইল বাঁচাও মির্জাপুর’। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাল্লাভারী করতে জাতীয় পার্টির (লাঙল) প্রতীকের প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জহিরের সঙ্গেও সমঝোতা করে তাকে নৌকার বিপক্ষে প্রচারনায় মাঠে নামান এই নেতারা। একজোট হয়ে স্বতন্ত্রও প্রার্থীর পক্ষে সকল নেতা নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক, পথসভা ও জনসভা ডাকেন। এসব সভায় তারা এমপি শুভ’র বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও নানা ধরনের মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে নৌকা হঠাতে বক্তব্য দিয়ে প্রচারনা চালাতে থাকেন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এসব নেতাদের অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের পরও খান আহমেদ শুভ বিপুল ভোটে আবারও এমপি নির্বাচিত হন।
এদিকে এমপি খান আহমেদ শুভ’র এ বিজয় ব্যক্তি ইমেজ ও জনপ্রিয়তার বিজয় হয়েছে বলে মির্জাপুরের রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করেন। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন মির্জাপুর উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক শক্তিপদ ঘোষ বলেন, খান আহমেদ শুভ একজন আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা। উপনির্বাচনে অল্প দিনের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি মির্জাপুরের উন্নয়নসহ নানা ভালো কাজের কারণ ব্যক্তি ইমেজ ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। মির্জাপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, খান আহমেদ শুভ মাত্র দেড় বছর সময়ে মির্জাপুরের যে উন্নয়ন করেছেন তা কল্পনাতীত। এই সময়ে তিনি উপজেলার ৮১টি সড়ক পাকা, ৬টি ব্রিজ নির্মাণ, ২৭৩টি মসজিদ-মন্দির ও কবরস্থানের অনুদান, ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ করেছেন। মির্জাপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুল ইসলাম সহিদ বলেন, গতানুগতিক উন্নয়ন ছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫শ অসুস্থ মানুষের চিকিৎসায় আড়াই কোটি টাকা মানবিক অনুদানের ব্যবস্থা করেন। যা বিগত সময়ে কোন এমপি করতে পারেননি। তাছাড়া এমপি নির্বাচিত হয়ে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেছেন। এ কারণে তাদের কাছে তাঁর ব্যক্তি ইমেজ ও জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। বড় নেতা নয় তৃণমুল নেতাদের সঙ্গে ভোটারদের সম্পর্ক। খান আহমেদ শুভ সেই তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করাতে কোন অপপ্রচারই ভোটাররা গ্রহণ করেননি।
এ ব্যাপারে খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, এ বিজয় আমাদের সবার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সততার সাথে মির্জাপুরে সর্বস্তরের মানুষের কাজ করেছি বলেই তারা আমার এ কাজের মূল্যায়ন করেছেন। ভবিষ্যতেও তিনি সততার সঙ্গে তাদের নিয়ে স্মার্ট মির্জাপুর গড়তে কাজ করে যাবেন বলে জানান।