স্টাফ রিপোর্টার ॥
কনকনে প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় টাঙ্গাইল জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। টাঙ্গাইলে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মঙ্গল ও বুধবার (২৩ ও ২৪ জানুয়ারি) সাধারণ ছুটি চলছে। এদিকে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দিনভর শীতের তীব্রতা থাকায় জনজীবন এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষণায় দিনের সোমবার (২২ জানুয়ারি) তাপমাত্রা সকাল ৬টার সময় ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মঙ্গল ও বুধবার (২৩ ও ২৪ জানুয়ারি) দুই দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ ছুটি বাড়ানো হতে পারে। ইতোমধ্যে জেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সপ্তাহ জুড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘন কুয়াশা এবং দিনভর উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় সাধারণ মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা ঠান্ডজনিত নানা রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তীব্র শীতে জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। শীতের তীব্রতায় দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। পরিবারের চাহিদা মেটাতে নিম্নআয়ের মানুষেরা শীত উপেক্ষা করেই কাজের সন্ধানে ছুটছেন।
জেলায় দিনের মধ্যবেলায় কখনও কখনও মৃদু সূর্যের দেখা মিললেও তাপমাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে না। শীতার্ত মানুষ দিন-রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। বিকাল থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে পরদিন সকাল পর্যন্ত একইধারা অব্যাহত থাকছে। শীতের কারণে ছিন্নমূল ও দিনমজুররা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ প্রায় প্রতিদিন ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত ও হিমশীতল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের প্রকটতায় শহরের ব্যস্ততম সড়ক ও গ্রামের হাটবাজারগুলো অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়েছে। ভোরে ঘনকুয়াশা থাকায় বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
এদিকে শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া-নিউনোনিয়াসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, শীত বাড়ায় মানুষ ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে শিশুই বেশি। শিশু-বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে এসব রোগ থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠান্ডা এড়িয়ে চলা জরুরি। শিশুদের ঠান্ডা ও ধুলোবালু থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। শিশুদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি। ঘরে ঠান্ডা হাওয়া যেন না প্রবেশ করে অভিভাবকদের সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন জানান, সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। সকাল ৯টার পর থেকে দিনের তাপমাত্রা উঠানামা করতে থাকে। তিনি জানান, আগামী ৭২ ঘন্টায় দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এরপর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। শীত সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের করণীয় বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কায়ছারুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলে দিনের তাপমাত্রা রাতের চেয়ে কমে যাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার বিষয়টি জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক উভয় কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
