
হাসান সিকদার ॥
শৈতপ্রবাহের কারণে আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এতে কয়েক দিন ধরেই বাড়েছে শীতের তীব্রতা। কাঠখড়ে আগুন ধরিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন ছিন্নমূলের মানুষজন। এদিকে শীত বাড়ার সাথে সাথে টাঙ্গাইলে গরম পোশাকের বেচাকেনা জমে উঠেছে। সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী শীতের কাপড় কিনতে দোকানগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্রেতারা আসছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্রেতারা তেমন কেনাকাটা করছেন না। গত বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতাও নেই তেমন। এবার তাদের লোকসানে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আশেপাশে ও ডিস্ট্রিক্ট আদালত চত্বর এলাকায় দেখা যায়, খোলা আকাশের নিচে বসা শীতের পোশাকের দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতারা তাদের চাহিদা, পছন্দ ও সামর্থ্য অনুযায়ী শীতের পোশাক কিনছেন। দামাদামি করে পছন্দের পোশাক কিনছেন ক্রেতারা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছরের থেকে এবার কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতা থাকলেও বেচা বিক্রি তেমন হচ্ছে না।
সখীপুর উপজেলার বোয়ালি গ্রামের বাসিন্দা দানিস মিয়া (৫৭) বলেন, কয়েক দিন ধরে খুব শীত পড়ছে। সকাল-বিকেল আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকি। পুরোনো যে কাপড় ছিলো তা দিয়ে আর শীত মানে না। ডিস্ট্রিক্ট আদালত চত্বর গরীবের মার্কেট নামে পরিচিত। এখানে গরম পোশাক কিনতে ডিস্ট্রিক্টে এসেছি। বিভিন্ন দোকান ঘুরে ৮০০ টাকা দিয়ে একটি জ্যাকেট কিনেছি। গত বছর যে জ্যাকেট ৬৫০ দিয়ে কিনেছি সে জ্যাকেট ৮০০ টাকা দিয়ে কিনে নিলাম। দেলদুয়ার উপজেলা থেকে আসা জয়নব বেগম বলেন, শীতে ঠান্ডা লেগেছে। তাই সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে গরম পোশাক কিনতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি মার্কেটে যেমন দাম, এখানেও প্রায় তেমন দামই নিচ্ছে। তাই কাপড় না কিনে চলে যাচ্ছি। পৌর শহরের আদালত পাড়া এলাকার মনুজ মিয়া বলেন, গত ২-৩ দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছি। কিন্তু আর না পেরে আমার জন্য জ্যাকেট ও ছেলে-মেয়েদের জন্য জ্যাকেটও কিনেছি। গতবারের থেকে এবার দামও বেড়েছে তারপরও কিনে নিলাম। আমরা গরীব মানুষ, ফুটপাত থেকে কাপড় কিনে পড়তে হয়। মার্কেটে গেলে তো দাম দ্বিগুণ নিবে। তাই ডিস্ট্রিক্ট আদালত চত্বরে এসে কাপড় কিনে নিয়ে গেলাম।
টাঙ্গাইল ডিস্ট্রিক্ট আদালত চত্বর এলাকায় খোলা আকাশের নিচের গরম কাপড়ের ব্যবসায়ী দিঘুলিয়া এলাকার শাহজাদা ইসলাম বলেন, সাত-আট বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। গত বছর বেচাকেনা ভালো হয়েছে। সে আশায় এবারও দ্বিগুণ কাপড় তুলেছি দোকানে। ২-৩ দিন ধরে শীতও অনেক, কিন্তু ক্রেতা নাই। আগের মতো ব্যবসা ভালো নেই। সব কিছুর দাম বৃদ্ধি। গত বছর যে কাপড় ৫০০-৭০০ দিয়ে এনেছি, সে কাপড় এবার ৮০০ দিয়ে আনতে হয়েছে। লাভ তো দূরে কথা যা দিয়ে কিনে এনেছি, সে দামও মানুষ বলে না। এবার অনেক লোকসান হবে। অপর ব্যবসায়ী কলেজ ছাত্র হাবিব মিয়া বলেন, আমি পড়াশোনা পাশাপাশি এখানে কাপড়ের ব্যবসা করি। গতবার ভালো বিক্রি করেছিলাম, সে আশায় এবার দোকানে অনেক কাপড় তুলেছি। ২ মাস হলো দোকানে কাপড় তুলেছি। অর্ধেকও বিক্রি করতে পারি নাই। আর এক থেকে দেড় মাস বিক্রি করতে পারবো। এভাবে বিক্রি হলে লাভ তো দূরে কথা, যে দাম দিয়ে এনেছি তাও তুলতেও পারবো না। আরেক ব্যবসায়ী কামাল মিয়া বলেন, আমরা ঢাকা থেকে গরম কাপড়ের লট এনে বিক্রি করি। আগে যে লট ৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনতাম সেটির দাম এখন ১৩-১৪ হাজার টাকার বেশি। তাই আগের তুলনায় লাভ অনেক কম হয় বললেই চলে। এই শীতে কয়েক দিন যাবত আমাদের বিক্রি বাড়ার কথা। কিন্তু কোন ক্রেতা নাই। গত বছর এসময় অনেক বেচাবিক্রি হয়। এবার তার অর্ধেকও বিক্রি করতে পারলাম না। আর হবে কিনা তাও জানি না।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা হকার্স লীগের সভাপতি বাদশা মিয়া বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পাশে ও ডিস্ট্রিক্ট আদালত চত্বর এলাকায় দুই জায়গা মিলে প্রায় ২০০-২২০ জন ব্যবসায়ী খোলা আকাশের নিচে গরম কাপড় বিক্রি করেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কাপড়ে দাম অনেক বেশি। এবার বিক্রিও কম হয়েছে। এবার ব্যবসায়ীরা লোকসানে পরবে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৪-৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়।