হাসান সিকদার ॥
টাঙ্গাইলে টানা এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। এর ফলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশায় খেটে-খাওয়া মানুষের জীবনে বেড়েছে দুর্ভোগ ও হতাশা। এই শীতের প্রকোপে ভালো নেই তারা। কমেছে আয়-রোজগার। এতে করে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। তাদের মধ্যে বেশি হতাশায় পড়েছেন- ব্যাটারি চালিত অটোভ্যান চালক, অটোরিকশা চালক ও দিন মজুর শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষগুলো।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশনে কথা হয় রহিজ উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, গরমের সময় দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা রোজগার হতো। কিন্তু শীতের সময়ে অর্ধেকে নেমেছে। কেননা শীতে অটোভ্যানে যাত্রী উঠে না। ঠান্ডায় বাতাস বেশি লাগে। এখন মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। দিনে যা রোজগার হচ্ছে এতে করে সংসার চলছে না। স্থানীয় এক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অটোভ্যান বানিয়েছিলাম। কিস্তি নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছি। তারা কয়দিন পরপর বাড়ি আসছে কিস্তির টাকার জন্য। অটোরিকশা চালক জব্বার আলী। সে প্রতিনিয়তই টাঙ্গাইল পৌর শহরে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালায়। বাড়ি পৌর শহরের দিঘুলিয়া এলাকায়। তিনি বলেন, শীতকাল এলে আমাদের আয় কমে যায়। সারাদিন ঘুরে ৪০০ টাকাও আয় হয় না। শীত আসলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হয়। ঠিকমতো রিকশা চালানো যায় না। গতবারের চেয়ে এবার বেশি শীত পড়েছে। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হচ্ছে। শুধু রহিজ বা জব্বার আলী নয়। তাদের মতো এমন আরও শতশত এসব পরিবহন শ্রমিকরা শীতের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সন্তানদের লেখাপড়ার খচর চালাতে হিমশিমে খাচ্ছে। শীতের মধ্যে দিন মজুরের কাজও পাওয়া যায় না। এদিকে, নিম্নআয়ের অনেক পরিবার তীব্র শীতে কষ্টে রাত্রীযাপন করছেন। এসব মানুষগুলো শীত নিবারণের জন্য পাচ্ছেন না শীতবস্ত্র। তবুও শীতের সাথে যুদ্ধ করে চলছে তারা।
এদিকে, শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে টাঙ্গাইলের তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টাঙ্গাইল জেলা আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে গত সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার (২৩ ও ২৪ জানুয়ারি) জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। সপ্তাহজুড়ে শীতের এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।
শীতের কারণে বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। টাঙ্গাইলের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: সুজাউদ্দিন তালুকদার বলেন, হাসপাতালগুলোয় ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। কারণ তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ ধরনের তাপমাত্রায় ঠান্ডাজনিত রোগে মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক বলেন, জেলার ১ হাজার ৬২৩টি বিদ্যালয়ে ৪ লাখ ৩২ হাজার ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করে। শীতে কোমলমতি শিশুরাই বেশি কষ্ট পায়। তীব্র শীতের কারণে দুই দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। আবহাওয়া যদি ১০ এর নিচে নেমে আসে তাহলে ছুটি বাড়ানো হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, এ জেলায় গত কয়েকদিন ধরেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামায় জেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুইদিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তাপমাত্রা বাড়লে যথারীতি ক্লাস চলবে। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া তিনি আরও বলেন, জেলা ও উপজেলাগুলোতে শীতে অসহায় ছিন্নমূল মানুষদের সরকারের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।