গোপালপুরে সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে লাপাত্তা পল্লী সেবা

অপরাধ গোপালপুর টাঙ্গাইল দুর্নীতি লিড নিউজ

নুর আলম, গোপালপুর ॥
গ্রামীণ খেটে খাওয়া নারী, পুরুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গ্রাহকের জমানো সঞ্চয়ী টাকা নিয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের হেমনগর ইউনিয়নে নলিন বাজারে অবস্থিত সমবায়ী প্রতিষ্ঠান পল্লী সেবা কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) নলিন বাজারে ‘পল্লী সেবা’ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ (রেজিঃ নং: ১৭৭) সাইনবোর্ড খুলে নেওয়া তালাবদ্ধ প্রধান কার্যালয়ের সামনে নলিন, শাখারিয়া, জগৎপুরা, নারুচি গ্রামের নারী, পুরুষ অবস্থান নিয়ে এ অভিযোগ জানান।

জগৎপুরা গ্রামের নার্গিস বেগম (৬০) অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে ডিম বিক্রি ও মানুষের কাছে আনা টাকা লিটন খানের কাছে ৮হাজার টাকা সঞ্চয় জমিয়ে ছিলাম, কয়েকদিন যাবৎ অফিসে তালা ঝুলানো দেখে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম । স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে লিটন খান কোথায় যেন চলে গিয়েছে, মোবাইল ফোন বন্ধ। একই গ্রামের খন্দকার কল্পনা (৪৮) অভিযোগ করেন, আমাদের বাড়ির ৬জন গ্রাহকের লক্ষাধিক টাকা সঞ্চয় জমা ছিলো লিটন খানের পল্লী সেবায়। আগে কর্মীরা সঞ্চয় আনলেও শেষ কয়েক মাস লিটন খান নিজেই সঞ্চয়ের টাকা আনতে বাড়ি যেয়ে বসে থাকতো। একমাত্র হলো তার কোন খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা আমাদের কষ্টের টাকা ফেরৎ চাই।

নারুচি গ্রামের জমশের আলী (৫২) বলেন, ভ্যান চালিয়ে ৩হাজার টাকা জমিয়ে ছিলাম, লিটন খানকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার টাকা দিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানাই। নলিন গ্রামের আয়েশা আক্তার (২৮) বলেন, সন্তানের পড়াশোনার জন্য অনেক কষ্টে ১৩শ টাকা জমিয়ে ছিলাম। ১মাস পর টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ১মাস থেকে লিটনকে খুঁজে পাচ্ছি না। টাকাটা না পেলে সন্তানের পড়াশোনার ক্ষতি হবে।
পল্লী সেবার কর্মী শিরীন মুঠোফোনে জানান, সময়মতো বেতন না পাওয়ায় ৩ মাস আগে পল্লী সেবা থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার সময় কমপক্ষে ১ হাজার গ্রাহক ছিলো। হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান হীরা বলেন, আমার কাছে এব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি। লোকমুখে শুনে নলিন বাজারের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে জেনেছি লিটন খান অনেকের জমানো সঞ্চয়ের ৭০/৮০লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, পল্লী সেবা নামে একটি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান নলিন বাজারে রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনা সত্যি হলে আইনানুগ ব্যবস্থা করা হবে এবং গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য করা হবে। গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কোনো অভিযোগ পাওয়া আসেনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইউএনও সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে প্রথম জানলাম। আমি এখনি খোঁজ নিচ্ছি, মালিক বা কতৃপক্ষকে ডেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভুক্তভোগীদের লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেন তিনি। এ ব্যাপারে জানতে পল্লী সেবার মালিক লিটন খানের ব্যবহৃত ০১৭৪৪১১**৭৫ নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

১৯০ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *