
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের বাসাইলে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার ৯ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় জিদান হাসান দীপ্ত (১৯) নামের এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত দীপ্ত উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের চাকদহ গ্রামের বিজিবি সদস্য জাহাঙ্গীরের ছেলে। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে বাসাইল থানা পুলিশ।
নিহতের নানা দেলুয়ার হোসেন ও স্থানীয় সাবেক মেম্বার রফিকুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকালে বাসাইল বাজারে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দেশিয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে দীপ্তকে মারাত্মক আহত করে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় ঢাকার পপুলার হাসপাতালে আইসিইউ রাখা হয়। পরে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
এদিকে টাঙ্গাইলের বাসাইলে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান শাকিল আহাম্মেদ ওরফে টিকটক শাকিল ও অনিক, বাসাইলের বেপারীপাড়া এলাকার আসাদুল ইসলাম আসাদকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বাসাইল থানার এসআই কাজী নজরুল ইসলাম অভিযান চালিয়ে তাদের তিন জনকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটা রাম দা ও লোহার পাইপে মোটরসাইকেলের চেইন প্রিমিয়াম ঝালাইযুক্ত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এরপর শাকিল ও অনিকের বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।
এর আগে গত (২৫ জানুয়ারি) বিকালে মেধাবী শিক্ষার্থী জিজান হাসান দীপ্তকে (১৮) কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান শাকিলের নেতৃত্বে ধারালো দা, কাঠের স্ট্যাম্প, লোহার পাইপে মোটরসাইকেলের চেইন প্রিমিয়াম ঝালাইযুক্ত দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুর“তর আহত করে। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এলে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান শাকিলসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে জিজান হাসান দীপ্তকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে ঢাকায় হস্তান্তর করা হয়। ওইদিন থেকে তাকে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
জিজান হাসান দীপ্ত সখীপুর উপজেলার চাকদহ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম মল্লিকের ছেলে। দীপ্ত ঢাকায় বিজিবি পিলখানায় অবস্থিত বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। দীপ্ত মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ ঘটনায় জিজান হাসান দীপ্তর মা বাদি হয়ে গত (২৭ জানুয়ারি) বাসাইল থানায় কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান বাসাইল থানাপাড়ার হোসেন আলীর ছেলে শাকিল আহাম্মেদ (২৫), বাসাইল শ্বশানঘাটা এলাকার টুইনা ওরফে টুনু মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন (২৪), থানাপাড়ার শাহ আলমের ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), বিরু আহাম্মেদের ছেলে মনা মিয়া (১৯), থানাপাড়ার মনির হোসেনের ছেলে অনিক মিয়া (১৯), থানাপাড়ার সেলিম মিয়ার ছেলে রাহাত হাসান (২০), শুকুর মিয়ার ছেলে জিহাদ মিয়া (১৯) ও কালু মিয়ার ছেলে সিমান্ত মিয়ার (১৯) নাম উল্লেখসহ আরও ৩/৪জন অজ্ঞাত যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর পুলিশ ঘটনার মূলহোতা শাকিল ও তার সহযোগী অনিক এবং আসাদ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। শাকিল ও অনিককে গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটা রাম দা ও লোহার পাইপে মোটরসাইকেলের চেইন প্রিমিয়াম ঝালাইযুক্ত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তারা তিনজন কারাগারে রয়েছে।
বাসাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মাজহারুল আমিন জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়ার পর ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতাকৃত আসামী থানা এলাকার শাকিল আহমেদ ১ নাম্বার আসামী। এছাড়াও মির্জাপুর উপজেলার অনিক মিয়া ও বাসাইলের বেপারীপাড়ার আসাদুল ইসলাম আসাদকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। শাকিল ও অনিককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে মারামারিতে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ আরও কিছু দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয় এবং তাদের নামে অস্ত্র আইনে আরেকটি পৃথক মামলা দেয়া হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।