
স্টাফ রিপোর্টার ॥
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে টাঙ্গাইল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) সনাতন ধর্মালম্বী শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে মাভাবিপ্রবিতে দীর্ঘদিনের চাওয়া কেন্দ্রীয় উপাসনালয়ের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেয় সনাতন ধর্মালম্বী শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) এর কার্যালযে় আবেদনপত্র জমা দিয়ে অবস্থান নেয় বিভিন্ন বিভাগের ও বিভিন্ন ব্যাচের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। শিক্ষার্থীদের দাবি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কেন্দ্রীয় উপাসনালয় এবং প্রত্যেক হলে একটি প্রার্থনা কক্ষ।
অবস্থানকালে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীর পিয়াল সাহা বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যুগ পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমাদের প্রার্থনা করার মতো কোনো উপাসনালয় নেই। এটি আমাদের প্রাণের দাবি। মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুব্রত রায় বলেন, বলতে লজ্জা লাগে তারপরও বলতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি যেখানে নিজস্ব কোন মন্দির নেই। এমনো হয়েছে আগের দিন আমাদের পূজার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি শেষ পরদিন সকালে গিয়ে ঝড়ে ভেঙে যায় আমাদের পূজা মন্ডপ। সমস্ত আয়োজন বৃথা হয়ে যায়। আবার নতুন করে ক্যাফেটেরিয়াতে আয়োজন করা হয়। মন্দির আমরা চাই চাই। সিএসই বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী চঞ্চল সাহা বলেন, ক্যাম্পাসের বয়স হয়ে গেছে ২৫ বছর হলো। অথচ দুঃখের সাথে বলতে হয় আমাদের কোনো কেন্দ্রীয় মন্দির নেই। বিদ্যাদেবী সরস্বতীর পূজা মন্ডপ কোথায় হবে তার কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। প্রতি বছর জায়গা চেয়ে অনুমতি নিতে হয়। মাঝে মাঝে এমনও হয় যে স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার পর পরিবর্তন করা হয় (গত বছরের ঘটনা)। আবার ২০২২ সালে বিকেল বেলা ঝড়বৃষ্টির জন্য প্যান্ডেল নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিমার হালকা কিছুটা ক্ষতিও হয়। পরে তড়িঘড়ি করে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে করা হয়। এই দোলাচলের অবসান চাই। আমরা এ রকম হেনস্তা হতে চাই না। বারবার পূজোর মতো বিষয় নিয়ে এ রকম অনুমতি চাওয়ার বিষয়টা লজ্জাই লাগে। আরেকটি বিষয় ৬টি হল আছে। অথচ হিন্দুদের জন্য কোনো প্রার্থনা কক্ষ নেই। এটা নিয়ে আমাদের নিত্য প্রার্থনার বিষয়টাও হয়ে উঠে না। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন বিষয় শুধু ক্যাম্পাস নয় জাতির জন্যও লজ্জার। খারাপ লাগে এজন্য আমার ক্যাম্পাস জীবনে দীর্ঘ ৬ বছর যাবত কেবল আশ্বাসই শুনে আসছি। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। আর আজকে তারা বলছেন যে, এর আগে যা হয়েছে সেগুলো অলিখিত ছিলো। যদি এতো পরিশ্রমের পর এ রকম মন্তব্য শুনতে হয়। তবে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে হতাশ হতে হয় যেন বিমাতা সুলভ আচরণ।
শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি রিজেন্ট বোর্ডে উপস্থাপন করবেন এবং আগামী সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে বসবেন।
শিক্ষার্থীদের আবেদন ও দাবির ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা দরখাস্ত দিয়েছে। আমরা ইউজিসিকে পাঠাই এবং বলি এখানে অনেক সনাতন শিক্ষার্থী রয়েছে। এই কারণে একটা প্রার্থনালয় দরকার। সেই কারণে আমাদের একটা বাজেট দেওয়া হোক। যাতে এখানে একটা প্রার্থনালয় তৈরি করতে পারি।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিগত ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সনাতন ধর্মালম্বী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ৫শ’ জনের অধিক। এর আগেও বেশ কয়েকবার মন্দিরের জন্য দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু ফল পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়।