
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের গ্রুপিং স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেই সাথে কেন্দ্রীয় একই কর্মসূচি দুই গ্রুপ প্রকাশ্যে পালন করছে আলাদাভাবে। মূলত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ ‘নৌকা লীগ’ ও ‘ঈগল লীগে’ ভাগ হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের পর টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকেরা একদিকে এবং মনোনয়ন না পেয়ে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) প্রতীকের সমর্থকেরা আরেক দিকে। গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) এই দুই পক্ষ আলাদাভাবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি সমাবেশ করেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগ গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে টাঙ্গাইল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতির সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। ওই সমাবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রতীকের পক্ষে কাজ করা আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আসেন। তখন নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন। তাঁরা তাঁদের অনুসারীদের নিয়ে শহরে শান্তি মিছিল করেন। পরে নৌকার সমর্থকেরা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে সমাবেশ করেন। এই সমাবেশে খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী এ্যাডভোকেট মামুন অর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, দপ্তর সম্পাদক খোরশেদ আলম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ, সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি, জেলা যুবলীগের সভাপতি মাসুদ পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাবুল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসিমা বাসেত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অপরদিকে একই কর্মসূচিতে শহীদ মিনারের সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনসারী, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক শরীফ হাজারী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসী আক্তার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাতিনুজ্জামান খান সুখন, জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক ইলিয়াস হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনসারী বলেন, আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করি। শেখ হাসিনার নির্দেশেই বাংলাদেশের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়েছে। আমরা জেনেছি, শান্তি সমাবেশ হবে, তাই মিছিল নিয়ে সেখানে গিয়েছি। এটা আমাদের তো কোনো অপরাধ নয়।
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ বলেন, কিছুদিন আগেই যাঁরা দলের সঙ্গে বেইমানি করে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন, তাঁদের দলের সমাবেশে যোগদান করাটা নৌকা মার্কার অনুসারীরা সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। তাই সেখান থেকে চলে গিয়ে পৃথকভাবে শান্তি সমাবেশ করেছেন।
বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছানোয়ার হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মামুন অর রশিদ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ছানোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। নির্বাচনে তিনি (ঈগল) প্রতীক নিয়ে (নৌকার) প্রার্থীকে পরাজিত করেন। নির্বাচনের পর থেকেই মূলত দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।