
স্টাফ রিপোর্টার ॥
জেবুন নাহার শিলা। বর্তমান পরিচয় তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটির সদস্য ও ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং একজন স্কুল শিক্ষিকা। গত বছরের (২৪ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার পশ্চিম কালিদাস পানাউল্লা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তবে যোগদানের পর থেকেই নানা টালবাহানায় ক্লাস ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। নানা ছুতোয় বারবার নিচ্ছেন ছুটি। গত এক বছরে তিনি ক্লাস নিয়েছেন মাত্র ৫৪ দিন।
জানা যায়, এই ছাত্রলীগ নেত্রী জেবুন নাহার শিলা যোগদানের পর থেকেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে আসেন না। এমনকি ছাত্রত্ব শেষ হলেও ইডেন কলেজ প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে থাকছেন আবাসিক হলে। কলেজের আয়েশা সিদ্দিকা হলের ৩০১ নম্বর কক্ষে থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় তিনি। ছাত্রলীগের কলেজ ও কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে প্রায়ই দেখা যায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনও করেছেন এই ছাত্রলীগ নেত্রী।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোনো চাকরিজীবী সংগঠনটির পদে বহাল থাকতে পারেন না। কিন্তু সরকারি চাকরি করার পরও গঠনতন্ত্রের এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ছাত্রলীগের পদ আঁকড়ে আছেন জেবুন নাহার শিলা। চষে বেড়াচ্ছেন রাজনীতির মাঠ। মিটিং-মিছিল কিছুই বাদ দিচ্ছেন না তিনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা উপলক্ষে গত (৩ জানুয়ারি) টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিথ্যাচার করে নিজেকে ইডেন কলেজের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও প্রথম ভোটার দাবি করেছেন ওই নেত্রী। অথচ ইডেন কলেজ থেকে বিগত ২০১৪ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন ও বিগত ২০১৩ সালে জাতীয় ভোটারের তালিকাভূক্ত হয়েছেন ওই নেত্রী। যা ভিডিও সহ রয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। ভোটার আইডি কার্ডে শিলার জন্ম তারিখ রয়েছে ১৯৯২ সালের (১ জানুয়ারি)।
পানাউল্লা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিতা ইসলাম রিফা জানান, শিলা ম্যাডাম আমাদের কিছুদিন ক্লাস নিয়েছেন। ম্যাডাম এখন আর স্কুলেই আসেন না। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মির্জা সুলতান মাহমুদ জানান, অনুপস্থিত ওই শিক্ষিকার ক্লাস আমরা পাঁচ শিক্ষক ভাগ-বন্টন করে নিয়েছি। যাতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একজন শিক্ষক জানান, শিলা ম্যাডাম না থাকায় আমাদের উপর চাপ পড়েছে। অনেক কষ্টে তার ক্লাস নিতে হচ্ছে। ৬ জন শিক্ষকের ক্লাস ৫ জনে মিলে নিচ্ছি।
পানাউল্লা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধীরেন চন্দ্র সরকার ওই শিক্ষিকার ৫৪ দিন বিদ্যালয়ে পাঠদানের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত (১০ সেপ্টেম্বর) থেকে শিক্ষক শিলা আর কোনো দিন স্কুলে আসেন নাই। ওই শিক্ষক স্কুলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও রাখেননি। রাজনৈতিক কোনো চাপ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দুই মাস পর পর শুধু চিকিৎসার জন্য ছুটির আবেদনে স্বাক্ষর করেছি। এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
শিলার ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্ন করলে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা বলেন, কমিটি গঠনের সময় হয়তো শিলার ছাত্রত্ব সঠিক ছিল। পরবর্তী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তবে শিলার আবাসিক হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বৈধতার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। গঠনতন্ত্রে কোনো চাকরিজীবীর স্বপদে বহাল থাকার বিধান আছে কি-না, জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, শিলা ওই চাকরি থেকে অব্যহতি নিয়েছেন বলে আমরা জানি। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরেও ছাত্রলীগের সদস্য পদে থাকা বৈধ কি-না, এ বিষয়ে ইনান বলেন, ওই নেত্রী ইডেনে মাস্টার্স শেষ করে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কোর্সে মাস্টার্স করছেন বলে অবগত রয়েছি। অন্যথা হলে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখব।
অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকের ব্যাপারে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার জানান, মেডিকেল ছুটি কাটাচ্ছেন শিলা। তবে ওই শিক্ষকের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে এসব বিষয়ে শিক্ষিকা জেবুন নাহার শিলা বলেন, নিয়ম মেনেই চলছি আমি, মেডিকেল ছুটিতে রয়েছি। আর আপনারা বিগত সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ করেছেন কিছুই হয়নি, এখনো হবে না। প্রথম ভোটার হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বীকারোক্তি বিষয়ে শিলা বলেন, এই ধরনের তথ্য খুঁজে কোন লাভ নেই। আমি কেন্দ্রীয় রাজনীতি করি, তাই ভার্চুয়াল জনসভায় টাঙ্গাইলকে রিপ্রেজেন্টিভ করেছি। এই ধরনের সংবাদ করে কিছুই করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নানা অজুহাতে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।