
সোহেল রানা, কালিহাতী ॥
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা ইউনিয়নের ভাঙ্গা বাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের কিছু জায়গা ও একটি ঘর জোর করে দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সচ্ছল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ফলে ঘরটি বরাদ্দ পাওয়া ভূমিহীন ব্যক্তি পরিবারসহ সে ঘরে উঠতে পারছেন না।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বল্লা ইউনিয়নের ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামে সরকারি জায়গায় ভূমিহীনদের জন্য ৩২টি ঘর নির্মাণ করা হয়। পরে সেগুলো ৩২টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরিবারগুলোর প্রধানের নামে ২ শতাংশ জায়গাসহ ঘরের কাগজপত্র ইতিমধ্যেই রেজিস্ট্রি হয়েছে। যে ৩২টি পরিবার ঘর বরাদ্দ পেয়েছে, এর মধ্যে সোনা মিয়ার স্ত্রী সালমার নাম রয়েছে। নিজের কোনো জায়গা-জমি না থাকায় তিনি পাশের গ্রাম বীর পাকুটিয়া বড় বোনের বাড়িতে বসবাস করেন।
এদিকে যে সরকারি জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে বাস করতেন সোহেল। তাঁর দাবি, প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে কিছু জায়গা এবং ঘর দেওয়া হবে বলে কথা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দের তালিকায় তাঁর নাম আসেনি। তাই তিনি প্রকল্পের একটি ঘর ভাগ্নীর নামে এনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুতার গোডাউন বানিয়ে রেখেছে।
তবে স্থানীয় লোকজন বলেন, সোহেল সরকারি জায়গা ও ঘর দখল করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি ভূমিহীন নন। তাঁর অনেক কৃষিজমি, ২৫টির মত টাঙ্গাইলের শাড়ি তৈরীর তাঁতসহ অর্থ-সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর পরিবার বেশ সচ্ছল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সালমার নামে বরাদ্দ হওয়া ঘরে বাস করছেন সোহেলের পরিবার। ঘরের পশ্চিম পাশেই রয়েছে সোহেলের নির্মাণ করা প্রায় ৪০ ফুট লম্বা একটি টিনের ঘর ও পাকা টয়লেট এবং গোসল খানা। তবে সেই ঘরও সরকারি জায়গায়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তার ভাগ্নীর নামে হলেও সেটি মামা সোহেল দখলে নিয়ে আশ্রয়ণের জায়গা সহ টিনের বাউন্ডারি করে রেখেছেন। তবে প্রতিবেশীরা বলেন, সোহেলের অনেক কৃষি জমি রয়েছে। সালমা এবং তার স্বামী সহজসরল মানুষ, মানুষের বাড়িতে কাজ করে চলে তাদের সংসার। তাই তাদেরকে বিভিন্ন কিছু বুঝিয়ে দূরে রেখেছেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সালমা বলেন, ঘর বরাদ্দের পর পরিবারসহ তিনি সেখানে উঠতে গিয়ে দেখেন মামা সোহেলের পরিবার বাস করছে। তারপর থেকে আমি আমার বোনের বাড়িতেই থাকি।
বিরপাকুটিয়া গ্রামের আলমগীরের স্ত্রী সালমার বড় বোন আফিয়া বলেন, সোহেল আমার মামা লাগে কিছু বলতে পারছি না। আমার ছোট বোন সালমা মানসিক ভারসাম্যহীন কথা গুছিয়ে বলতে পারেনা তার স্বামীও একি রকম। গ্রামের বাড়ি বল্লা- সিংগাইর ওর জায়গা জমি নেই। চার বছর যাবত আমার বাড়িতেই থাকে আপনারা মামাকে বলে সালমাকে ঘরে তুলে দেন।
এ বিষয়ে সোহেল বলেন, আমার জায়গায় সরকারি ঘর তুলছে সে জন্যে আমার ভাগ্নী গরিব মানুষ তার নামে ঘর দিয়েছে। আর আমার থাকার ঘর আশ্রয়ণ প্রকল্পের এরিয়ায় পড়েছে। কিন্তু উপজেলার ইউএনও, এসিল্যান্ড ও প্রকল্প কর্মকর্তাসহ সবাই দেখে জায়গা ছেড়ে দিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উকিল দিয়ে স্ট্যাম্পে লিখে ডিসি স্যারের কাছ থেকে এই জায়গায় ঘর রাখার অনুমোদন এনেছি।
কিন্তু লিখিত অনুমোদন দেখাতে বললে তিনি কোন কাগজ পত্র দেখাতে পারনি।
এ বিষয়ে বল্লা ইউনিয়ন (ভারপ্রাপ্ত) ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, আমি ঘর নির্মাণের পরে যোগদান করছি। সোহেলের বাড়িতে আশ্রয়ণের সীমানা নির্ধারণের ছবি তুলে সহকারি কমিশনারকে দেখিয়েছি। লিখিত চিঠিও দিয়েছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সেহাব উদ্দিন জানান, জায়গার সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি আমাদের না। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। স্যারকে সাথে নিয়ে সীমানা এবং ঘরের বিষয়টি ব্যবস্থা নিব।
কালিহাতী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) মোহাম্মদ সিফাত বিন সাদেক জানান, যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে অবশ্যই আমরা বিধি মোতাবেক পদক্ষেপ নিব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হুসেইন বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি এবং কেউ জানায়নি। বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।