বিভাস কৃষ্ণ চৌধুরী ॥
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বাঁধ (রাস্তা) নির্মাণ ও বাংলা ড্রেজার বসিয়ে জেগে উঠা ফসলি জমির মাটি ভেকু দিয়ে অবাধে ট্রাকযোগে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া, কোনাবাড়ী ও ভালকুটিয়া মৌজা এলাকায় যমুনা নদীতে জেগে উঠা এসব ফসলি জমি কেটে বিক্রি করছে নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জুরান মন্ডল, তার ছেলে সুমন ও তাদেরই আরেক সহযোগী আব্দুল্লাহসহ স্থানীয় কিছু যুবলীগের নেতাকর্মী।
অবাধে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করার কারণে সম্প্রতি এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধের সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। সেই সাথে ভাঙনরোধে নদীতে ফেলা জিওব্যাগ সরিয়ে বালুবাহী ট্রাক চলাচলের রাস্তা করেছে। জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করায় নদীতে অপরিকল্পিতভাবে গভীরতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধ বালু ব্যবসা পরিচালনা করছে। এলাকার কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিতুলিয়াপাড়া এলাকা যমুনা নদীর বাঁধের সড়কে সর্তককরণ একটি সাইটবোর্ড টাঙিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, “বাঁধের উপরে স্থাপিত জিও ব্যাগ, জিও সাঁট (কাপড়) যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য কোন প্রকার নৌকার এ্যাংকর, খাড়ালো কোদাল, কাঁচি, ব্রেড, দা, কুড়াল, সিগারেট বিড়ির আগুন, ইত্যাদি দ্বারা কাটা বা ক্ষতিগ্রস্থ না করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।” কিন্তু এই এসব কিছুই মানছেন না বালু ব্যবসায়ীরা। দিন-রাত অবাদে চর কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দেয়। গেল বর্ষায় ভাঙনে ওই দুইটি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়। সেসময় তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধ করে। এরপর শুষ্ক মৌসুমে অসাধু প্রভাবশালী স্থানীয় নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা জুরান আলী মন্ডল, তার ছেলে সুমন ও তার প্রতিবেশী আব্দুল্লাহসহ বেশকয়েকজন মিলে সেখানকার জিও ব্যাগ ভেকু দিয়ে সরিয়ে ও পাকা সড়ক কেটে নদীতে রাস্তা (বাধ) তৈরি করে অবাধে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অনেকেই বলেন, যেখানে সরকার দলীয় লোকজন স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। সেখানে প্রতিবাদ করলে নিজের ক্ষতি ছাড়া কিছুই হবে না। যারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তাদের মাসোহারা দেওয়া হয় নিয়মিত। এছাড়া কতিপয় জনপ্রতিনিধিরাও বালু উত্তোলনে জড়িত। দ্রুত জেগে উঠা চর কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন ভাঙনের শিকার এলাকাবাসী।
বালু ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতা জুরান আলী মন্ডল বলেন, ওইখানে আমি নিজে বালু উত্তোলন করি না। সাবেক ইউপি সদস্য কালাম মেম্বারসহ বেশকয়েকজনে ব্যবসা করছে। আপনারা কি আমাকেই দেখেন। অন্যদের ঘাট চোখে পড়ে না।
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান বলেন, নদী থেকে ফসলি জমি কেটে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে ফসলি জমি বা চর কেটে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে আমরা দু’টি অভিযান চালিয়ে অর্থদন্ড করেছি। বালু উত্তোলন বন্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।