টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে দোকান নির্মাণে জায়গা বরাদ্দ

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল স্পেশাল লিড নিউজ স্বাস্থ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥
২৬.৫০ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতাল চত্বরেই স্থাপন করা হয়েছে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ১৫ তলা ভবন। এছাড়াও এই চত্বরে রয়েছে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল, নার্সিং ইন্সটিটিউটসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনা। সেই হাসপাতাল চত্বরে দোকান নির্মাণের জন্য জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। সেখানে একতলা ভবন নির্মাণ করছেন বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্যবসায়ী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দিতে সম্মত ছিলেন না বলে জানা গেছে। তারপরও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেনসহ কমিটির প্রভাবশালী রাজনৈতিক সদস্যরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ব্যক্তিগত ও বেসরকারী স্থাপনা অপসারনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সর্বস্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং স্থানীয় জনসাধারণ।
হাসপাতাল সূত্রে ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্যরা জানান, শিলা আনসারী নামক একজন ব্যবসায়ী হাসপাতাল চত্বরে জায়গা বরাদ্দ চেয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে একটি আবেদন করেন। তিনি ওই জায়গায় এজেন্ট ব্যাংকের একটি শাখা, এটিএম বুথ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পণ্যের দোকান করবেন বলে আবেদনে উল্লেখ করেন। এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও তত্ত্ববধায়ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালককে বিষয়টি জানান। কিন্তু মহা-পরিচালক হাসপাতালের ভেতর দোকানের জন্য জায়গা বরাদ্দের অনুমতি দেননি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাঁধা উপেক্ষা করে কমিটির সদস্যরা গত (১৩ নভেম্বর) সভায় আবেদনকারী শিলা আনসারীর নামে ৭৫০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দেন। বরাদ্দের চুক্তিপত্রে দেখা যায়, বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মধ্যে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে নিতে বলা হয়েছে। ১২ বছর মেয়াদী এই বরাদ্দ চুক্তিতে মাসিক ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তিন বছর পর পর শতকরা ১০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাপ্ত ভাড়া থেকে শতকরা ১০ ভাগ হাসপাতাল মসজিদের উন্নয়নে, ৩০ ভাগ রোগী কল্যাণ সমিতিতে, ২০ ভাগ হাসপাতাল কর্মচারী সমিতিতে এবং ৪০ ভাগ হাসপাতালের উন্নয়নে ব্যয় করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকের ভেতর ঢোকার পরেই উত্তর পাশে একতলা ভবন তৈরি হচ্ছে। ভবনটি ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন দেয়ালে আস্তর দেয়ার কাজ চলছে। সার্টার লাগানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সেখানে কর্মরত রাজমিস্ত্রী শামীম মিয়া জানান, দুই মাস আগে তারা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। রানা আনসারী (বরাদ্দ প্রাপ্ত শিলা আনসারীর স্বামী) নামক এক ব্যক্তি তাদের দিয়ে এ ভবন নির্মাণ করাচ্ছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-পরিচালকের দায়িত্বে থাকা খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দোকানের জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব এসেছিলো। তখন আমি জানিয়ে দিয়েছি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের অনুমতি ছাড়া কোন স্থাপনা নির্মাণের জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়া বিধি সম্মত হবে না। পরে উনারা অনুমতি ছাড়াই বরাদ্দ দিয়েছেন। এজন্য সভার কার্য বিবরণীতে আমি স্বাক্ষর করিনি। হাসপাতালে স্থাপনা নির্মাণ কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালককে জানানো হয়েছে।

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্য এবং হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট অন্তত পাঁচজন জানিয়েছেন, উক্ত জায়গা বরাদ্দ দেয়ার জন্য কমিটির কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক সদস্য অর্ধ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। তাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না থাকলেও তারা বিধিবহির্ভূতভাবে হাসপাতালের ভেতর বাণিজ্যিক কাজে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কমিটির সদস্য টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনসারী বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। অপর সদস্য টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান প্রিন্স বলেন, বরাদ্দের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এটা বরাদ্দ দিয়েছেন এমপি ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সাহেব।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় রেজুলেশন করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখানে নিয়মের কোন ব্যত্যয় হয়নি। বরাদ্দ দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের অনুমোদন লাগে না। এটা ব্যবস্থাপনা কমিটির এখতিয়ার। এর আগেও ক্যান্টিন ও গ্যারেজের জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়নি।

 

 

১৮৩ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *