
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় ফাতেমা বেগম ও রঞ্জু মিয়া দম্পতিকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আধাপাকা ঘর দেয়া হয়েছে। সেই ঘরে তিন সন্তান নিয়ে সুখেই বসবাস করছেন তারা। ভূমি ও গৃহহীন ফাতেমা বেগম একজন নারী উদ্যোক্তা। ঘরের পাশে রয়েছে তার একটি চার দোকান। নার্সারীর ব্যবসা করে তিনি সংসারের হাল ধরেছেন।
ভূঞাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফাতেমা বেগম টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার পৌর শহরের শিয়ালকোল ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাওয়ার আগে তারা অন্যের জায়গায় বসবাস করতেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের বারান্দায় ফাতেমা চাষ করেছেন ফলজ বৃক্ষ ও সবজি নার্সারী। ছোট এ নার্সারীতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতের চারা রয়েছে।
নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘরের বারান্দা ও উঠানের সামনের জায়গা পতিত না রেখে চিন্তা করলাম ছোট পরিসরে একটি নার্সারী বাগান করা যায় কি না। পরে স্বামীর সহযোগিতায় নার্সারী করি। প্রথমে অল্প প্রজাতের চারা নিয়ে শুরু করি। বর্তমানে ২০-২৫ ধরণের চারা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন এসব বিক্রি করে প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করছেন। আগে অভাবের সংসার থাকলেও বর্তমানে ভালোভাবে চলতে পারছেন তারা। সন্তানরা ঢাকায় চাকরি ও রাজমিস্ত্রীর কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর ও জায়গা না পেলে ভাগ্য বদল হতো না। আমাকে ঘর দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করি ও হাজার বছর বেঁচে থাকুক। সরকারিভাবে যদি আমাকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে নার্সারী আরও বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা আছে।
ফাতেমা বেগমের স্বামী রঞ্জু মিয়া বলেন, ভূমিও গৃহহীন থাকায় আগে হতাশায় দিন কাটাচ্ছিলাম। পরে ঘরের জন্য আবেদন করলে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন স্যার ও পিইআইও জহিরুল ইসলাম স্যার যাচাই-বাছাই করে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ব্যবস্থা করে দেন। এই ঘর উপহার পেয়ে অনেক ভালো আছি পরিবার নিয়ে। আমার স্ত্রী ঘরের বারান্দায় ও সামনে উঠানে চারা লাগিয়েছে তাকে কাজে সহযোগিতা করি। এখন আমাদের সংসার আগের থেকে অনেক ভালো চলছে।
সরেজমিনে উপজেলা পৌর শহরের শিয়ালকোলের ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘুরে দেখা গেছে, এখানে ১২ টি পরিবার বসবাস করছেন। এখান কেউ সেলুন দোকান করেছেন, দর্জির কাজ করছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। প্রকল্পের উঠানে সবজি চাষ করেছেন। বসবাসরতরা পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে সুখেই দিন কাটছে।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, ভূঞাপুর পৌরসভার শিয়ালকোল এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১২টি পরিবার বসবাস করছে। এরমধ্যে ফাতেমা নামে এক উপকারভোগী নারীকে নার্সারী বাগান করতে উৎসাহ প্রদান করলে তিনি নার্সারী করেন। চারা বিক্রি করে নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের সমিতির মাধ্যমে উদ্ধুদ্ধ করি। যে যে পেশায় যেতে চাই তাদের সহযোগিতা করি। শুধু ফাতেমাকেই নয়, তারমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসরত এখানকার কয়েকজনকে মুদি দোকান, সেলুনের দোকান, ব্যাটারি চালিত অটোভ্যান দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আরেক নারীকে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। এসব বাসিন্দারা এখন সুন্দরভাবে পরিবার নিয়ে জীবন-যাপন করছেন। ফলে তাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। যে যে পেশায় যেতে খুশি আমরা তাদের সার্বিকভাবে সব সময় সহযোগিতা করি।
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহ ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আধাপাকা ঘর উপহার হিসেবে প্রদান করে সরকার। যে নারী উদ্যোক্তা হয়ে নার্সারী করেছে তা প্রশংসনীয়। আশ্রয়ণে যারা বসবাস করছে তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে।