ঋতু বৈচিত্র্যে ঝরা পাতার দিন-ধূলি ওড়া বাতাস, পাখির নীড় খোঁজা

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল স্পেশাল লিড নিউজ

এম কবির ॥
বসন্ত বেলার মাতাল সমীরণে ধূলি ওড়া। শীতের হিম বাতাস ফিরে যাওয়ার পালা। জানিয়ে দিচ্ছে বাংলার ফাল্গুনের অপার রূপ বৈচিত্র। সামনেই চৈত্র। গাছে গাছে নতুন পাতা কিশলয়ের সময় আসছে। এর আগে পাতা ঝরে তরু তলে শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি। বক সারসসহ অন্য যে পাখিরা দিনা কয়েক আগেও বৃক্ষের শাখা প্রশাখায় পত্রমঞ্জুরির মধ্যে বাসা বুনেছিল তারা সেই বৃক্ষ চিনতে পারছে না। ফুলের সঙ্গে ভ্রমরের প্রীতির মতো বৃক্ষের সঙ্গে প্রীতি পাখিকূলের। বৃক্ষরাজি কিছুটা বেজার। গাছেদের বাঁক বদলে নতুন রূপে সাজবার পালায় কিশলয় এখনো চোখ মেলেনি। কবি সাহিত্যিকরা অবশ্য ফাগুনের ধ্রুপদ সুরের ব্যঞ্জনা পেয়ে খাতা কলম ল্যাপটপ নিয়ে বসছেন। ফুলেরা পাঁপড়ি মেলে ভ্রমর ডেকে এনেছে আগেই।
পত্রবিহীন শাখা-প্রশাখার বৃক্ষ তলে তরুছায়া কমেছে। তবে মনে করিয়ে দেয় বৃক্ষের নতুন সজিব পত্রমঞ্জরী সাজিয়ে দেবে প্রকৃতিকে। বৃক্ষ তার আপন নিয়মেই প্রতি বছর পুরানো পাতা ঝরিয়ে নিজেকে নতুন পাতায় সাজিয়ে নেয়। প্রশান্তি এনে দেয় ছায়া দিয়ে। কিশলয় এগিয়ে নেবে বসন্ত বেলার মধুময়তায় নতুন দিনের কাছে। কতই না মায়া প্রকৃতির। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সুর ভেসে আসে ‘ছিন্ন পাতায় সাজাই তরনী একা একা করি খেলা’। ফাল্গুনের রোদেলা দুপুরে হালকা বাতাসের এমনই দিনে আনমনা হয়ে মানব হৃদয়ের ভাবাবেগে কত কিছুই না মনে হয়। এমনই দুপুরে ঘুমকাতুরেদের জন্য অপেক্ষায় থাকে বিছানা। সন্ধ্যার আগে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর কখনো মনে হতে পারে তখন কি সকাল। ফাল্গুন চৈত্রের বসন্ত বিলাসে এমন ভ্রান্তিবিলাসও পেয়ে বসে।
গাছের পাতা নিয়েও আছে কত কথা। বাংলায় পাতা। সংস্কৃত পত্র। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা অবশ্য পাতার বদলে পত্র বেশি ব্যবহার করেন। যেমন পত্র মঞ্জরি, পত্র পল্লব, পত্র বৃন্ত, পত্র কুঞ্জ ইত্যাদি। উদ্ভিদের বিটপ অংশের প্রধান পার্শ্ব প্রতঙ্গ। এই পাতার প্রধান কাজ সালোকসংশ্লেষণ (ফটোসিনথিসিস)। সূর্যালোক পাতার কোষগুলো ভেদ করে ক্লোরোপ্লান্টে পৌঁছে দেয়। এই পাতা বৃক্ষের খাদ্য ও জলের আধার। প্রতিটি বৃক্ষের পাতার ধরন একেক রকম। কার্যকারিতা এক। বৃক্ষের পত্র মঞ্জরির সৌন্দর্য আকর্ষণ করে পাখিকূলে। পাতা ঝরার দিনে পাখিরা অপেক্ষায় থাকে কখন নতুন পাতায় সেজে উঠবে প্রিয় বৃক্ষ। বারবার উড়ে উড়ে এসে দেখে যায়। এবারের ফাগুনে বৃক্ষরাজি সবুজের নবপত্রে মায়াকাননে সেজে উঠবে। একটু করে ধুলি উড়িয়ে সামান্য পাক দিয়ে নবপত্রের ছন্দে সুর তুলে মানব হৃদয় ভরিয়ে আরও সবুজ করে দেবে। পরিবর্তিত ঋতু বৈচিত্রে এমনটি জানিয়ে দিচ্ছে বৃক্ষ।
এই সময়ে বাগানের ফুলে পাপড়ি মেলে বসন্তের নাচন শুরু হয়েছে। এরমধ্যেই তরুণ-তরুণীদের হৃদয়ে ফুরফুরে হাওয়ায় রোমান্টিসিজম। অবশ্য মধ্যবয়সীরা কম যান না। হাতের কাছেই মিলেছে গোলাপ গাঁদাসহ কত বাহাড়ি ফুল। দাম কিছুটা বেশি। তা হোক। তরুণীদের খোঁপায় গাঁদা না থাকলে জুটি বেমানান। পথ চলতে প্রকৃতির এমনই ছোঁয়া অনুভূত হয়। পাতা ঝরিয়ে নতুন রূপে সাজবার প্রস্তুতি নিয়েছে বৃক্ষরাজি। মনে হবে নিসর্গের চরাচর। জলবায়ুর বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদগণ কতই না কথা বলছেন। পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে। উত্তপ্ত হবে সামনের দিনগুলো। ধরীত্রি মানব জীবনকে অসহনীয় করে তুলবে। মাঠের কৃষক বসন্তের চেনারূপ দেখছে। মাঠে বোরো চারা রোপণের মৌসুম শেষ হওয়ার পথে। বসন্তের বাউরি বাতাসের আমেজ বুঝতে পারছে। বাতাস বইলে স্বগোক্তি করে চৈত্রের রুক্ষè দিনের কথা। প্রকৃতিতে ফাল্গুনের ধারা এমনিভাবেই বয়ে যায়।

২৯৮ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *