সাদ্দাম ইমন ॥
শীত শেষে ফাল্গুনের এই সময়ে টাঙ্গাইলের সর্বত্রই এখন ধুলা-বালুতে একাকার। মৌসুমের এই সময়ে সবকিছুই ঢেকে যাচ্ছে ধুলার চাদরে। ধুলার যন্ত্রণায় এখন টাঙ্গাইল শহরের রাস্তায় থাকা যাচ্ছে না। টাঙ্গাইল শহরের সব রাস্তায়ই এখন ধুলা-বালুতে হৈইহুল্লোড় অবস্থা। ঘরবাড়ি, স্কুল-মাদরাসা, অফিস-আদালত ঢেকে যাচ্ছে ধুলার চাদরে। প্রতিদিন ধোয়ামোছা না করলে ধুলার আস্তরে ঢেকে যাচ্ছে সবকিছু। চলতি বছর বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেড়েছে ধুলার পরিমাণ। এর সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।
চিকিৎসরা জানান, ধুলোর কারণে শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, হাঁপানি, চোখের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ ফুসফুসে ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাই বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ধুলার দূষণ। এ কারণেই নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে টাঙ্গাইলবাসী। ধুলার দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক নাগরিকেরা। ধুলা-বালু সকল শ্রেণির মানুষের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ধুলা-বালুর কারণে ব্রঙ্কাইটিজ, সর্দি, কাশি, জ্বর, চোখের ব্যাথা, মাথা ব্যথাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হবে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগ বেড়ে যাবে।
শুষ্ক মৌসুমে এসে সর্বসাধারণকে পড়তে হয়েছে ধুলাদূষণে। প্রতিনিয়ত স্কুল-কলেজে যাতায়াতকারী কোমলমতি শিক্ষার্থী ছাড়াও এ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সর্বসাধারণ। যেন দেখার কেউ নেই। উন্নয়ন-ধুলায় শ্বাস নিতেও কষ্ট শহরবাসীর। শহরের রাস্তার দুই পাশের দোকানপাট আর হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো ধুলায় ঢাকা পড়েছে। সাইদুল ইসলাম নামে এক প্রাইভেটকার চালক জানান, কালো রঙের গাড়ি এখানে আশেপাশে কোথাও এক থেকে দুই মিনিট রেখে দেখুন ধুলার আস্তর কি পরিমাণ পড়ে। ধুলার কারণে এখানকার চায়ের দোকান আর খাবারের হোটেলে মানুষ খেতে পারে না। গৃহবধু বিলকিস জাহান বলেন, সবসময় ব্যাপক ধুলা-বালু ওড়ায় আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বাসা পাল্টে ধুলামুক্ত সুবিধাজনক জায়গায় চলে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, শুধু উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়িই নয়, নিয়ম না মেনে বহুতল ভবন নির্মাণের মাটি, বালু, সিমেন্ট, পাথর, নুড়িপাথর, কংক্রিট যত্রতত্র রেখে দেওয়া হয়। নির্মাণাধীন ভবনের বর্জ্য রাস্তা দখল করে মাসের পর মাস ফেলে রাখায় সেখান থেকেই পদপিষ্ট হয়ে ধুলোর সৃষ্টি হয়। রাস্তার পাশের ড্রেনেজের ময়লা পরিষ্কার করা হলেও ড্রেন থেকে তোলা আবর্জনা রাস্তার পাশে জমিয়ে রাখায় শুকিয়ে যাচ্ছে। এগুলো থেকেও ধুলা উড়ছে। শুকনো ময়লা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ায় তা ধুলায় পরিণত হয়ে দূষণের সৃষ্টি করছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় ভাঙাচোরা রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় তা থেকেও সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার। ধুলা থেকে বাঁচতে সবসময়ই মাস্ক পরে থাকতে হয় আশপাশের ব্যবসায়ীদের। আবার পথচারীরাও ধুলা থেকে বাঁচতে নাক-মুখ চেপে চলেন। ধুলার কারণে ক্রেতাহীন দিন কাটে ফুটপাথের দোকানিদের। প্রতিটি সড়কের দুই পাশে তৈরি হওয়া খানাখন্দ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার, যা দূষিত করছে পরিবেশ। দিন দিন ধুলার প্রকোপ বাড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন মানুষ। রাস্তায় ধুলার পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে নাক-মুখ ঢাকার মাস্ক বিক্রেতার সংখ্যা। কারণ রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ছে ধুলার কুয়াশা। ধুলার কারণে চোখ মেলে তাকানোর অবস্থা নেই। গাড়ির চাকার সঙ্গে ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। চোখের মধ্যে ঢুকে পড়ছে কচকচে ধুলা।
টাঙ্গাইলের সর্বত্রই এখন ধুলা-বালুতে একাকার
১৬৯ Views